কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি-সম্পাদকের সই জাল করে ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের কমিটি গঠনের অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাদিসুর রহমান মিলনসহ ১২ জনের নামে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা হয়েছে। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ঝালকাঠি সদর থানায় মামলাটি করেন মাসুদ সিকদার নামের এক যুবলীগ কর্মী।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন হাদিসুর রহমান মিলন (৩৮), মিলন হাওলাদার (৩৬), তরিকুল ইসলাম (৩০), মো. মনিরুজ্জামান (৩৮), শাখাওয়াত হোসেন (৩৬), মো. মরিয়াজ হাওলাদার (৩৫), আল আরাফাত (২৩), আসাদুজ্জামান তালুকদার (৪০), আলীম আল রজিব (৪০), মাহমুদুল সাগর (২৫), মোহাম্মদ রনি হাওলাদার (৩৫) ও বশির আহম্মেদ খলিফাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জন। অভিযুক্তরা অধিকাংশই জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক নেতাকর্মী।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের সিল ও সই জাল করে জেলা যুবলীগের ২২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
গত ৬ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠি শহরের ডাক্তার পট্টি এলাকায় সৈয়দ হাদিসুর রহমানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চান মামলার বাদী মাসুদ সিকদার। এ জন্য অভিযুক্ত হাদিসুর রহমান মিলনের সঙ্গে থাকা সহযোগিরা তাকে মারধর করেন। বিষয়টি ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের বৈধ কমিটির আহ্বায়ক রেজাউল করিম ও যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল শরীফকে জানান মাসুদ। পরে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, কেন্দ্র থেকে এ ধরনের কোনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
জানা গেছে, গত ৩ সেপ্টেম্বর যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের সই সম্বলিত একটি কমিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে রেজাউল করিমকে আহ্বায়ক এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাসিদুর রহমানকে যুগ্ম আহ্বায়ক উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বর্তমান কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন মো. কামাল শরীফ।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ঝালকাঠি শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চেষ্টা করলে সৈয়দ হাসিদুর রহমানের আট অনুসারীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এদিকে বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপদপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেনের সই করা দলীয় প্যাডে একটি চিঠি পাঠানো হয় ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিমের কাছে।
সেই চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ঝালকাঠি জেলা শাখার কোনো নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কমিটি ছড়ানো হয়েছে সেটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। যারা এ গুজব ও অপপ্রচারের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।’
কেন্দ্রীয় কমিটির চিঠি পাওয়ার পর পরই সই এবং সিল জালিয়াতির অভিযোগ এনে সৈয়দ হাদিসুর রহমানসহ তার অনুসারীদের নামে মামলা হলো।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ হাদিসুর রহমান। তিনি মামলার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংস করার নোংরা খেলায় মেতেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা। তারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতেই আমাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।’
এ প্রসঙ্গে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রেজাউল করিম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেলা যুবলীগের একটি ভুয়া কমিটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়ে বিভ্রান্তি দূর করা হয়েছে।’
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘যুবলীগের কমিটি নিয়ে জাল-জালিয়াতির অভিযোগে থানায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মন্তব্য করুন