রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে পদ্মার ভাঙনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রায় ৩৬ বর্গকিলোমিটারের এ চর প্রতি বছরের মতো এবারও নদী ঙনের কবলে পড়েছে। চারটি গ্রামের অন্তত ৪০ মিটার করে জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চর ছেড়েছে প্রায় ১৫০ পরিবার, কেউ ভেঙে পড়া ঘরবাড়িতে বসবাস করছেন, কেউ নৌকায় উঠেই নতুন ঠিকানা খুঁজছেন।
চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১, ২ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক গ্রাম তলিয়ে যায়। অনেকে তখনই চর ছেড়ে চলে গেছে, অনেকে কষ্ট করে পানির মধ্যে বাস করছিল। এখন পানি নামছে, কিন্তু শুরু হয়েছে ভাঙন। ঘরবাড়ি ভেঙে মানুষকে ওপারে চলে যেতে হচ্ছে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, পদ্মা নদীর তীরে হঠাৎপাড়া, চর বয়ারমারি, কামারপাড়া, জামাইপাড়া ও আমতলা খাসমহল গ্রামে এখনো ভাঙন চলছে। জামাইপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমানের বাড়ির অর্ধেক নদীতে পড়ে গেছে। বাকি অর্ধেক ভেঙে নৌকায় তুলছেন তিনি।
সাইদুর জানান, এর আগে দুবার বাড়ি সরিয়েছেন। এবার আর চরে নিজের জায়গা নেই। তাই ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
হঠাৎপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ বছর আগে একবার বাড়ি সরাতে হয়েছিল। এবার আর সরিয়ে বাড়ি করার অবস্থা নেই। চম্পকনগরে দুই কাঠা জমি কিনেছি। এবার সেখানেই চলে যাচ্ছি। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। মাত্র কয়েক দিনে কমপক্ষে ৪ রশি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। প্রায় ১৫০ পরিবার ইতোমধ্যে এপারে চলে এসেছে, আরও অনেকে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
বয়রামারি গ্রামের গৃহবধূ তাহেরা খাতুন বলেন, ‘ছয় বছর আগে একবার বাড়ি ভেঙে দিয়েছিলাম। এখন আর কোথাও বাড়ি বানানোর জায়গা নেই। জন্মের থেকেই চরে থাকি, আর থাকা হলো না। এপারের কানাইডাঙ্গা গ্রামে ভাসুরের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছি। পরে জমি দেখে নিজস্ব ঘর বানাব।’
চর আষাড়িয়াদহ এলাকায় পদ্মার পানির বিপৎসীমা সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে রাজশাহী শহর সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন পানির উচ্চতা পরিমাপ করা হয়। সম্প্রতি সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৭ দশমিক ৪৯ মিটার। সোমবার দুপুরে পানির উচ্চতা কমে ১৬ মিটার হয়েছে, তবে চরের অনেক জায়গা এখনো পানির নিচে।
চর আষাড়িয়াদহ ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা চরের মানুষ খুব অসহায় অবস্থায় আছি। ত্রাণ সামগ্রী খুব সীমিত— যার বাড়ি ভেঙে গেছে, তাদের কাছে ১০ কেজি চালও কিছুই না। সরকারকে এদের পাশে দাঁড়াতে হবে। চরটাকে রক্ষা করতে হবে। না হলে প্রতি বছর যেভাবে চর ভাঙছে, একসময় এটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে, নদী ঢুকে যাবে ভারতে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, পানি বৃদ্ধির শুরুতে ২০টি পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে চর ছেড়ে গেছে। পানি কমার সময়ে এ সংখ্যা বেড়ে ৯০টি পরিবারে দাঁড়িয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ঢেউটিনসহ সহায়তা দেওয়া হবে।’
নদীভাঙনের আতঙ্কে চর ছেড়ে আসা মানুষদের চোখে অসহায়তা, কষ্ট আর অনিশ্চয়তা— সবই মিশে আছে। তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়, ঘরবাড়ি পুনর্বাসন ও জরুরি সহায়তার ব্যবস্থা এখন সময়োপযোগী এবং অপরিহার্য।
মন্তব্য করুন