শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে রাজশাহীর সর্বত্র এখন উৎসবের আমেজ। জেলার গ্রাম থেকে শহর— সবখানেই চলছে মণ্ডপ সাজানোর কাজ আর প্রতিমা নির্মাণের ব্যস্ততা।
এ বছর জেলাজুড়ে মোট ৪৬২টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, যার মধ্যে ৩৮২টি গ্রামীণ এলাকায় এবং ৮০টি মহানগরে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসব।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার।
তিনি বলেন, দুর্গোৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রাণের উৎসব। পূজাকে ঘিরে প্রতিটি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ জোরেশোরে চলছে। উৎসব যেন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকবে। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ ও আনসারের পাশাপাশি র্যাবের টহল থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে এবং স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হবে।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মহিনুল হাসান বলেন, দুর্গাপূজা সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক। পূজা নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
সভায় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য, বিভিন্ন উপজেলার পূজা উদযাপন পরিষদের প্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমাশিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোথাও কাঠামোয় মাটি লাগানোর কাজ শেষ, কোথাও আবার তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠছে দেবী দুর্গার মুখাবয়ব। প্রতিমা সাজসজ্জার কাজেও আনা হচ্ছে বৈচিত্র্য।
শহরের শিল্পী অরুণ পাল বলেন, দুর্গাপূজা ঘিরে আমাদের সারা বছরের আয়ের বড় অংশ আসে। এবার খড়, কাঠ ও মাটির দাম অনেক বেড়েছে, কিন্তু সুন্দর প্রতিমা বানিয়ে সবার মুখে হাসি ফোটানোই আমাদের লক্ষ্য।
মহানগরের আরেক শিল্পী বিপ্লব মণ্ডল বলেন, এবার অনেক মণ্ডপে আধুনিক সাজসজ্জার অর্ডার পেয়েছি। কোথাও আলো-ঝলমলে থিম, কোথাও আবার ঐতিহ্যবাহী রঙের ছোঁয়া। প্রতিটি প্রতিমায় নতুনত্ব আনতে দিন-রাত কাজ করছি।
শহরের বেলদারপাড়া পূজামণ্ডপে প্রতিমা দেখতে আসা কলেজছাত্রী প্রিয়া রায় বলেন, প্রতিমার রঙতুলি দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। সারাবছর আমরা এ সময়টার জন্য অপেক্ষা করি।
গোদাগাড়ীর এক মণ্ডপের সভাপতি সত্য রঞ্জন দাস বলেন, এবার আমাদের মণ্ডপে নতুনভাবে আলোকসজ্জা করা হচ্ছে। এলাকার সবাই মিলে তহবিল জোগাড় করছি। পূজা আমাদের কাছে আনন্দের উৎসব, আবার সম্প্রীতির প্রতীকও।
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী দিয়ে শুরু হয়ে মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী পেরিয়ে মহাদশমীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে পাঁচ দিনব্যাপী এ শারদীয় দুর্গোৎসব। আয়োজকদের আশা, জেলার প্রতিটি মণ্ডপে প্রতিমার সাজসজ্জা ও আয়োজন দেখতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ ভিড় জমাবে এবং উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে।
মন্তব্য করুন