গত দুদিনের টানা ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজানের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এতে পরশুরাম উপজেলার আমন চাষিসহ নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে পড়ে লোকালয়ে পানি ঢুকায় এবং ভারী বৃষ্টির কারণে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, ফেনী, লালমনিরহাট, নীলফামারী, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ ওড়িশা ও উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০টি বাঁধ মেরামত করেছেন। তবুও শঙ্কা কাটছে না উত্তরাঞ্চলের জনপদের মানুষের। তিনটি নদীর পানি বুধবার (১ অক্টোবর) সকাল থেকে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। যে কোনো মুহূর্তে একাধিক স্থানে বাঁধ ভাঙার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এরই মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। পানিসম্পদ উপদেষ্টাসহ সংস্থাটির দপ্তরের সচিব, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা বাঁধ ভাঙন স্থান পরিদর্শন করে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
একই সঙ্গে ৭০০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্থানীয় বন্যা নদীর তীরবর্তী ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অলকা গ্রামের ওমর ফারুখ অভিযোগ করেন, বেশিরভাগ বেড়িবাঁধ মেরামতে নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে। নদীর পানি বেড়ে গেলে এসব বাঁধ পুনরায় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চিথলিয়া ইউনিয়নের আবদুর রহিম বলেন, যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে এবং উজানের পানি বেড়ে গেছে ধারণা করা হচ্ছে আবারও বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে আমাদের বাড়িঘর ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।
২০২৪ সালের বন্যায় ভেঙে যাওয়া পাঁচটি বাঁধ এই বছর আবারও ভেঙে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাহাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, প্রতিবছর বাঁধ ভাঙে আর মেরামত করে। এতে লাভবান হয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদার কিন্তু আমরা নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষেরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাই।
উপজেলার পশ্চিম অলকা গ্রামের বোরহান উদ্দিন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছরের ঠিকাদার দিয়ে মেরামত করেছেন কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন বলেন, গত দুদিনের টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানির বেড়ে যাওয়ায় তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে। গতবারের বড় ভাঙনগুলো জিও টিউব দিয়ে মেরামত করা হয়েছে, তাই ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা কম।
নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, চলতি বছরের ভয়াবহ বন্যায় ৪১টি স্থানে বাঁধ ভেঙে যায়। তার মধ্যে ৫ কোটি টাকা ব্যয় করে ৪০টি ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পুনরায় মেরামত করা হয়েছে। পরশুরাম উপজেলার ডিএম সাহেবনগর এলাকায় একটি ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত কাজ শুরু করলে ভারতীয় বিএসএফ বাধা দেওয়ায় সে বাঁধ মেরামত বন্ধ হয়ে যায়।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, চলতি বছরে জিও টিউব পদ্ধতিতে মেরামত করা হয়েছে। কতটুকু টেকসই হয়, সেটি এখন দেখার বিষয়।
মন্তব্য করুন