সালাম শান্তির সোপান। ইসলামী অভিবাদনের এক অনিন্দ্য কথন। সালাম অন্তরে প্রশান্তির জন্ম দেয়। কল্যাণ বয়ে আনে। দাম্ভিক আত্মাকে পবিত্র করে তোলে। অহংকার থেকে মুক্তি দান করে। পরস্পর পরস্পরে সৃষ্ট বিদ্বেষ বিদূরিত করে। সালামের মাধ্যমে একে অপরের শান্তি কামনা করা হয়। এতে করে মানুষে মানুষে হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। সমাজে অনাবিল সুখ-শান্তি আর ভালোবাসা বিরাজিত হয়।
হাদিস শরিফে এসেছে, যখন একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে সালাম ও মুসাফাহা করেন, তখন আল্লাহতায়ালা তাদের বিদায় নেওয়ার আগেই উভয়ের গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সালামের সর্বোত্তম অনুসরণকারী। ছোট-বড় সবাইকে তিনি নিজে এগিয়ে গিয়ে সালাম দিতেন। তার এই আমল আমাদের জন্য এক অনন্য আদর্শ।
নবীজি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা প্রকৃত ইমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ইমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসতে লাগবে? (কাজটি হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’ (তিরমিজি : ২৬৮৮)
সালামের কথা সামনে আসতেই অনেকেই জানতে চান, ‘মেসেঞ্জার, কমেন্ট বা এজাতীয় কোনো মাধ্যমে কেউ সালাম দিলে তার সালামের উত্তর দেওয়াও কি ওয়াজিব?’
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ইসলামি শরিয়ত মতে সালাম দেওয়া সুন্নত। কিন্তু সালামের উত্তর যথাযথভাবে উচ্চারণ করে এবং সালামদাতাকে শুনিয়ে দেওয়া ওয়াজিব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমাদেরকে যখন অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তম প্রত্যাভিবাদন করবে অথবা তার অনুরূপ করবে। (সুরা নিসা: ৮৬)
আহমাদুল্লাহ জানান, এ আয়াতে ‘অভিবাদন’ বলে সালাম উদ্দেশ্য। আয়াতের মর্ম হলো কেউ সালাম দিলে আরও উত্তম শব্দে সালামের জবাব দিতে হবে।
তিনি বলেন, উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ সালামের কোনো বিশেষ ধরনকে নির্দিষ্ট করেননি। তাই সরাসরি সালাম দিলে যেমন সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব, কেউ মেসেজে লিখে সালাম দিলে ওই সালামের উত্তর দেওয়াও ওয়াজিব। অতএব মেসেঞ্জার, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি মেসেজিং অ্যাপে কেউ সালাম দিলে তার সালামের জবাব দিতে হবে।
মাসিক আল কাউসারে বলা হয়েছে, উল্লিখিত ক্ষেত্রে সালামের জবাব তাকে শুনিয়ে দেওয়া জরুরি নয়। এমনকি জবাবের জন্য তাকে পাল্টা উত্তর লেখা বা ফোন করে জানানোও জরুরি নয়। কেবল মুখে জবাব দিয়ে দিলেই হয়ে যাবে। (ফয়জুল কাদির : ৪/৩১, রদ্দুল মুহতার : ৬/৪১৫)
মন্তব্য করুন