ভূমধ্যসাগরের গিগলিয়ো দ্বীপের উপকূলে ২০১২ সালের ১৩ জানুয়ারি ঘটে এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ৩ হাজার ২০০ যাত্রী ও ১ হাজার ২৩ কর্মী নিয়ে চলা ইতালির প্রমোদতরী কোস্টা কনকর্ডিয়া ধাক্কা খায় পাথরে। মুহূর্তেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়, প্রাণ হারান ৩২ জন।
প্রমোদতরীটির ক্যাপ্টেন ছিলেন ফ্রান্সেস্কো শেটিনো। সেদিন তার সঙ্গে ছিলেন তার বান্ধবী ও সাবেক নৃত্যশিল্পী ডমনিকা সেমোর্টান। বান্ধবীকে প্রভাবিত করতে এবং সাবেক বস মারিয়ো পালোম্বোকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে পরিকল্পনা করেন শেটিনো। যদিও তখন মারিয়ো দ্বীপে ছিলেন না, খবর পাওয়ার পরও নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি তিনি। বরং নির্ধারিত পথ ছেড়ে জাহাজকে দ্বীপের একেবারে কাছাকাছি নিয়ে যান।
সমস্যা আরও জটিল হয় যখন শেটিনো নিজের চশমা ভুলে আসায় সহকারীর নির্দেশনায় জাহাজ চালাচ্ছিলেন। কিন্তু সেই সহকারীও ছিলেন অনভিজ্ঞ। হঠাৎ করেই বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে কনকর্ডিয়া, পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খায় জাহাজের নিচের অংশ। প্রায় ৭০ মিটারজুড়ে ফেটে যায় তলদেশ। পানি ঢুকতে শুরু করে ইঞ্জিনঘরে, মুহূর্তের মধ্যেই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জাহাজ।
কিন্তু তারপরও যাত্রীদের আশ্বস্ত করতে থাকেন শেটিনো, ‘তেমন কোনো অঘটন ঘটেনি।’ ততক্ষণে জাহাজের অর্ধেক ডুবে গেছে। প্রাথমিকভাবে উদ্ধার করতে চাননি তিনি, উপকূলরক্ষীর সাহায্যও নেননি। কিন্তু ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ৩০ ডিগ্রি কাত হয়ে যায় প্রমোদতরী। তখনই বিপদঘণ্টি বাজিয়ে সাহায্য চাওয়া হয়। যাত্রীরা কেউ লাইফ জ্যাকেটে সুরক্ষা নেন, কেউ আবার দ্বীপ পর্যন্ত সাঁতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সে সময়ও ক্যাপ্টেন শেটিনো প্রমোদতরী ছেড়ে সবার আগে নিরাপদে চলে যান।
তবে, সাহসিকতার পরিচয় দেন ভারতীয় দুই কর্মী কর্ণনাথ রমেশনা ও রাসেল রেবেলো। যাত্রীদের লাইফবোটে তোলার সময় প্রাণ হারান রাসেল। মোট ৩২ জন নিহত হন এই দুর্ঘটনায়। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় বাকি যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয় কোস্টা কনকর্ডিয়ার।
পরে আদালতে শেটিনো সব দায় চাপান সহকারী নাবিক রবার্টো বোসিয়োর ওপর। এমনকি দাবি করেন, পা পিছলে লাইফবোটে পড়ে গিয়ে নাকি তিনি জাহাজ থেকে নেমে যান। তবে আদালত তার কোনো যুক্তিই গ্রহণ করেনি। বর্তমানে কারাগারেই আছেন এই কুখ্যাত ক্যাপ্টেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
মন্তব্য করুন