রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে পাঁচ ইউনিয়নের গ্রামের পর গ্রাম। রোববার (০৫ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে কয়েক মিনিটের ঝড়ে আলমবিদিতর এবং নোহালী ইউনিয়নে আট শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঝড়ে গাছপালা উপড়ে পড়ে, আগাম আমন ধানের ফসল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানান, সকাল ৮টার পর হঠাৎ দমকা হাওয়ার সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হয়। মুহূর্তেই তাণ্ডব চালিয়ে যায় ঝড়। বৃষ্টির সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের আকস্মিক তাণ্ডবে টিনশেড ও আধা পাকা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে এবং অসংখ্য গাছপালা উপড়ে যায়। উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের কুতুব, খামার মোহনা ও চরাঞ্চলের কয়েকটি গ্রামসহ নোহালীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ ছাড়া আরও তিন ইউনিয়নের ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড় কিছুক্ষণ স্থায়ী হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুণ বেশি হত বলে জানান তারা।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে আলমবিদিতর, নোহালী, কোলকোন্দ, লক্ষীটারী ও গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের প্রায় ১২০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঝড়ের কবলে আলমবিদিতর ইউনিয়নের খামার মোহনা গ্রামের মফিজার রহমানের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ ঝড় উঠে দেখতে দেখতে চোখের সামনে ঘরবাড়ি ভাঙ্গি গেইছে। এখন হামার থাকার জায়গা নাই।’
তার মতো ঘরবাড়ি হারিয়েছেন একই গ্রামের আনুর মিয়া ও আব্দুল হাই। তারা বলছেন, আমরা কিছুই বাঁচাতে পারিনি। ঘরের টিন, দরজা, চাল সব উড়ে গেছে। আমরা এখন খোলা আকাশের নিচে। এখন খাবার আর থাকার জায়গা নিয়ে বড় চিন্তা।
একই ইউনিয়নের কুতুব গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, ধানক্ষেত পানির নিচে। ঘর ভেঙে ছেলেও আহত হয়েছে। এ ক্ষতি কীভাবে সামলাবো আল্লাহ জানে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সজিবুল করীম বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে কয়েক শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা কালবেলাকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে পাঁচ ইউনিয়নের আনুমানিক ১২০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে দুইশো পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আরও শুকনো খাবার পাঠানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে খুব দ্রুত খাদ্যসামগ্রী ও নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা রয়েছে। হাতে পেলেই তা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন