বিভেদ নয় ঐক্য চাই, স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে চাই বলে জানিয়েছেন পিরোজপুর-১ আসনের জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে পিরোজপুর সদর উপজেলার ৬নং শারিকতলা ডুমুরীতলা ইউনিয়ন পরিষদ অডিটোরিয়ামে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির এ কথা বলেন তিনি। সভায় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শাহনাজ পারভিনের সভাপতিত্বে ও ইউপি সচিব সুমন শিকদারের সঞ্চালনায় ইউনিয়ন পরিষদের সব জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
মাসুদ সাঈদী বলেন, আজ আমরা এক বাংলাদেশে আছি, যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে দীর্ঘ ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমে সবচেয়ে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়েছে। গত ১৬ বছর ধরে আমরা গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছি। আমরা কেউ জামায়াত, কেউ বিএনপি, কেউ অন্যকোনো ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তির কর্মী — কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই, স্বাধীন বাংলাদেশে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। তিনি বলেন, এই দীর্ঘ সময়ে আমরা দেখেছি কীভাবে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারবিরোধী মতের মানুষগুলোর ওপর কীভাবে নির্যাতন, মামলা, হত্যা, গুম-খুন, হামলা চালিয়ে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। কীভাবে দেশের শীর্ষস্থানীয় নিরপরাধ আলেমদের অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়েছে। খুনি হাসিনার এই জুলুমের হাত থেকে কেউ রেহাই পায়নি। দেশের প্রতিটি আন্দোলনকারী, প্রতিটি গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ আজ সেই নিপীড়নের সাক্ষী। কিন্তু তবুও আমরা দমে যাইনি— বরং প্রতিটি নির্যাতনের পর আল্লাহর দয়ায় আমরা আরও দৃঢ় হয়েছি, আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। তিনি আরও বলেন, এখন যখন জনগণের আন্দোলন সফল পরিসমাপ্তির পথে, যখন ফ্যাসিবাদী শাসন বাংলাদেশ থেকে চিরতরে অবসানের পথে, তখন আমাদের ভেতরে বিভেদ সৃষ্টির গভীর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা জনতার রোষে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তারা জানে ঐক্যবদ্ধ ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় গেলে তাদের জবাবদিহিতার হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। তাই তারা এখন ভেতরে ভেতরে ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ঐক্যের শক্তি ভাঙার চেষ্টা করছে। আমাদের সেই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
মাসুদ সাঈদী বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, গঠনমূলক সমালোচনা ও মতভেদ গনতান্ত্রিক রাজনীতির অন্যতম সৌন্দর্য। কিন্তু সেই সমালোচনা যেন আমাদের ঐক্যকে দুর্বল না করে। আজ যদি আমরা একে অপরের বিরুদ্ধে কথা বলি, যদি দলীয় স্বার্থকে জাতীয় স্বার্থের উপরে স্থান দিই, তাহলে আমরা সেই একই ভুল করব, যা শত্রুরা চায়। আমরা চাই, ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল শক্তি একই পতাকার নিচে দাঁড়াক। আমরা চাই, যে স্বপ্ন নিয়ে শহীদরা জীবন দিয়েছে, সেই বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাই হাতে হাত রাখুক। তিনি বলেন, স্বপ্নের বাংলাদেশ হবে এমন এক দেশ, যেখানে মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে, যার যার রাজনৈতিক মতপ্রকাশ করতে পারবে, ভিন্ন মতের জন্য নির্যাতিত হবে না। আমরা এমন এক দেশ চাই যেখানে দুর্নীতি নয়, ন্যায়-নীতি ইনসাফ থাকবে। যেখানে অপশাসন নয় সুশাসন থাকবে। যেখানে স্বৈরতন্ত্র নয় গনতন্ত্র থাকবে। অন্য কোন দেশ পরিচালিত সরকার নয়, এই দেশের জনগণ দ্বারা পরিচালিত সরকার থাকবে। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, তাই আজ আমাদের সবার অঙ্গীকার হোক—বিভেদ নয়, ঐক্য চাই। আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল শক্তি একসাথে ছিলাম, আছি এবং থাকব—যতদিন না এই দেশ থেকে ফ্যাসিবাদের শেষ চিহ্নটুকু মুছে ফেলতে না পারি, যতদিন না একটি সত্যিকারের শোষনণ বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে না পারি। তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যই আমাদের শক্তি। এই শক্তিই হবে আগামী দিনের পরিবর্তনের চালিকা শক্তি। আমরা সম্মিলিতভাবে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছি, এবার ইনশাআল্লাহ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন এক স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়বোই। মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা শাখার নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রব, জেলা এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা সিদ্দিকুল ইসলাম, সদর উপজেলা আমির মাওলানা সিদ্দিকুর রহমান, শারিকতলা ডুমুরীতলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল খান, ইউপি সদস্য ময়না বেগম, ইউপি সদস্য শিরিন আক্তার, ইউপি সদস্য তপন কুমার সাহা, শারিকতলা ইউনিয়ন জামায়াত আমির ওমর ফারুক, যুবনেতা মুবাশশির সানি, জাকারিয়া হোসেন, মামুন হোসেনসহ ইউনিয়ন জামায়াত, বিএনপি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা।
মন্তব্য করুন