

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে চলমান শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় শীতকালীন বিভিন্ন ফসল ভালো হলেও ক্ষতির মুখে পড়েছে বোরো বীজতলা। তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে সৃষ্ট কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে পচে নষ্ট হচ্ছে নাবি বীজতলার চারা। এতে উপজেলায় বোরো আবাদে চারা সংকটের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। এতে ফুলবাড়ীতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নাও হতে পারে।
ফুলবাড়ীতে চলতি মৌসুমে ১৪ হাজার ১৮৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। এ লক্ষ্যে ৬৮৬ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। যেসব চাষি আগাম বীজতলা তৈরি করেছেন, তাদের বীজতলা নষ্ট হয়নি। তবে তীব্র শীতের কারণে উপজেলায় অন্যান্য ফসল গম, সরিষা, ভুট্টা ও সবজির চাষ খুব ভালো হয়েছে।
জানা গেছে, বীজতলা তৈরির জন্য প্রতি কাঠা জমি লিজ নিতে খরচ হয়েছে ১ হাজার টাকা। বীজ কিনতে হয়েছে ৮০০ টাকার। এ ছাড়া সার, সেচ, কৃষিশ্রমিকের মজুরি খরচ মিলে আরও হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। কৃষকদের ভাষ্য, প্রতি কাঠা বীজতলার চারা দিয়ে চার বিঘা জমিতে ধান রোপণ করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে বীজতলার যে অবস্থা, তাতে এক বিঘা এবং সর্বোচ্চ আড়াই বিঘা ধান রোপণ করা সম্ভব হবে। চাষিরা বলছেন, জ্বালানি তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বোরো চাষের খরচ অনেক বেড়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, শৈত্যপ্রবাহ শেষে কিছুটা উষ্ণ আবহাওয়া শুরু হলে চারার খুব একটা ক্ষতি হবে না। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। উপজেলার পৌর এলাকার বারোকোনা, আলাদিপুর ইউনিয়নের রাঙামাটি, শিবনগর ইউনিয়নের পাঠকপাড়া, বুজবুক শিবনগর, পলি শিবনগর, আমডুঙ্গিসহ উপজেলার বিভিন্ন মাঠের বীজতলা ঘুরে দেখা গেছে, বীজতলার চারা নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলো এখনও বেঁচে আছে, সেগুলো বাঁচাতে ছত্রাকনাশক স্প্রেসহ বিভিন্নভাবে পরিচর্যা করছেন কৃষক।
বীজতলা নষ্ট হওয়ায় ধানের চারার দামও বেড়েছে। গত বছর প্রতি কাঠা জমির বীজতলার চারার দাম ছিল তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এ বছর একই পরিমাণ জমির চারা চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা হাঁকা হচ্ছে। ফলে এতে চাষিদের বোরো উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে।
পৌর এলাকার পূর্ব কাঁটাবাড়ী গ্রামের বোরোচাষি হিরেন্দ্রনাথ বর্মন জানান, তিনি ৬ বিঘা জমিতে ধান লাগানোর জন্য বীজতলা দিয়েছিলেন। তবে ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে বীজতলার ১৫ থেকে ২০ ভাগ চারা পচে গেছে।
একই গ্রামের বর্গাচাষি আমিনুল ইসলাম জানান, এবার ঘন কুয়াশায় ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। আশপাশের সব কৃষকের একই অবস্থা। ধানের চারা যিনি কিনে লাগাবেন, সেটা নিয়েও দুশ্চিন্তায় আছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফ আব্দুল্লাহ মোস্তাফিন কালবেলাকে বলেন, কুয়াশাজনিত ক্ষতি কমাতে বীজতলায় পলিথিনের ছাউনি দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করতে বলা হচ্ছে। প্রয়োজনে ছত্রাকনাশক ব্যবহারেরও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছেন।
মন্তব্য করুন