বগুড়া সদর উপজেলায় পিটিয়ে হত্যা করা রোহান চৌধুরীর (২৩) লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। এসময় তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। সেই সঙ্গে তারা রাজাপুর ইউনিয়ন বিট পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু জাফরের অপসারণ দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দুই দফায় দেড় ঘণ্টা বগুড়ার দ্বিতীয় বাইপাস সড়কের মানিকচক বাজারে সামনে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী।
এদিকে রোহান চৌধুরী হত্যার পর ওই এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেওয়ায় বুধবার লাশ উদ্ধারের পর থেকেই মানিকচক বাজার এবং জয়বাংলা হাট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নিহত রোহান চৌধুরীর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর লাশ এলাকায় পৌঁছলে এলাকার কয়েক শত নারী-পুরুষ সমবেত হন। তারা লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করেন। সেখানে নিহতের চাচা ফারুক চৌধুরী ও রওশন চৌধুরী, বড়ভাই রবিউল চৌধুরী এবং বোন কামরুন নাহার বক্তব্য রাখেন।
নিহতের চাচা ফারুক চৌধুরী অভিযোগ করেন, রাজাপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন ওরফে গিয়াস মেম্বার এবং তার ভাগ্নে বগুড়া পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বগুড়া সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান মিন্টু এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। তাদের নির্দেশে ও সহযোগিতায় রোহানকে হত্যা ও সেলিমকে পিটিয়ে আহত করা হয়। ঘটনার সময় সরকারি পরিসেবা ৯৯৯-এ ফোন করা হলেও রাজাপুর ইউনিয়ন বিট পুলিশের দায়িত্বে থাকা এসআই জাফর বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে রোহান চৌধুরী হত্যার পর থেকেই গিয়াস মেম্বার ও মিন্টু কাউন্সিলর স্বপরিবারে আত্মগোপন করেন। তাদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। মিন্টু কাউন্সিলরের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইলে ফোন দিলে কাউন্সিলর কার্যালয়ের সচিব পরিচয় দিয়ে আতাউর রহমান রবি নামে এক ব্যক্তি ফোন ধরেন। তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর ফোনটি তার কাছে রেখে বাইরে গেছেন। কখন ফিরবেন সেটি তিনি জানেন না।’
ঘটনাস্থলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহীম জানান, বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ঘটনায় জড়িতদের বাড়িতে হামলা চালাতে পারেন এই শঙ্কা থেকে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বগুড়া সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক শাহিনুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘রোহান চৌধুরী হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। লাশ দাফনের পর রাতে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলে পুলিশকে জানানো হয়েছে।’ বুধবার হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশি তৎপরতা চলছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে একটি মামলায় জামিন নিতে আদালতে যাওয়ার পথে রোহান চৌধুরী ও সেলিম নামের দুই যুবককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রোহান চৌধুরীকে পিটিয়ে হত্যা এবং সেলিমকে গুরুতর আহত অবস্থায় রাজাপুর ইউনিয়নের জয়বাংলা হাটে ফেলে রাখা হয়।
মন্তব্য করুন