রাজবাড়ীতে প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করেই ইলিশ ধরছে জেলেরা। পদ্মার পাড়ে ইলিশের হাট বসেছে এবং প্রকাশ্যে ইলিশ ধরছে জেলেরা।
বর্তমানে সারাদেশে সরকার ঘোষিত ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর ২২ দিন ইলিশ শিকার বন্ধ রাখা হয়। তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীতে চলছে ইলিশ শিকার। জেলেদের দাবি, তারা সরকারি সহযোগিতা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ইলিশ ধরছে। প্রকৃতভাবে বেশিরভার জেলের নিবন্ধন বা কার্ড হয়নি। যারা নিবন্ধিত তারাও সহযোগিতা পাননি। অপরপক্ষে যারা জেলে নয় কিন্তু অন্য পেশার মানুষ তারা অনেকেই সরকারি সুবিধা পেয়েছে।
ইলিশের হাট বসছে পদ্মার পাড়েই। পানির দামে বিক্রি হচ্ছে ডিমওয়ালা ইলিশ। এই ইলিশ কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে পদ্মার পাড়ে ভিড় করছে সাধারণ মানুষ। সস্তা ইলিশ বস্তায় ভরে ঘরে এনে ফ্রিজ ভরছে সাধারণ ভোক্তারা। ইলিশের হাট দুর্গম চরে অনেকটা কষ্ট করেই যেতে হয় বিধায় অল্প-স্বল্প কিনে ফিরছে না ক্রেতারা।
৫ থেকে ১০ কেজি করে বড় বড় ডিমওয়ালা এসব ইলিশ কিনছে অল্প টাকায়। দুটি ইলিশেই প্রায় দেড় কেজি ওজন হচ্ছে। এতো সস্তায় ইলিশ বিক্রির খবর পেয়ে সকাল থেকে সারাদিনই পদ্মার তীরে ভিড় থাকে সাধারণ মানুষের।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী কার্ডধারী জেলে ১৪ হাজার ৯৩ জন। তাদের মধ্যে চার হাজার ৩৯৩ জন এ বছর সরকারি সহযোগিতার চাল পেয়েছে।
বুধবার (২৫ অক্টোবর) সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জেলার পদ্মার দৌলতদিয়ার কলাবাগান, দেবগ্রাম, অন্তরমোড়, সদরের বরাট, মহাদেবপুর, জৌকুড়া ও ধাওয়াপাড়া এলাকায় দেদারছে ধরা হচ্ছে ইলিশ মাছ। তবে নদীতে এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মৎস্য অফিসের কাউকে অভিযান চালাতে দেখা যায়নি।
ইলিশ কেনা এক ক্রেতা কালবেলাকে বলেন, জেলেরা জাল নিয়ে যখন নদীর পাড়ে আসে, তখন জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ দেখা যায়। নদীর পাড়ে ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকায় অস্থায়ী চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন খাবার দোকানও গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক খান কালবেলাকে বলেন, পদ্মার পাড়ে ইলিশের হাটের খবর পেয়ে তিনি গিয়েছিলেন নিজের চোখে দেখতে। প্রায় দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করে পদ্মার তীরে পৌঁছাতে সক্ষম হন। চরের রাস্তা দিয়ে পদ্মার পার পর্যন্ত যাওয়ার পথে অসংখ্য মানুষকে ব্যাগ, বস্তা বোঝাই করে মাছ নিয়ে ফিরতে দেখেছি। মাছ নিয়ে ক্রেতাদের ঘরে ফেরার স্রোত দেখলেই পথ চেনা যায়, কাউকে জিজ্ঞেস করতে হয় না।
সুজন হাওলাদার নামে এক জেলে কালবেলাকে বলেন, আমরা সব সময় পদ্মায় মাছ ধরি। কিন্তু বন্ধের সময় কোনো সহযোগিতা পাই না। নিবন্ধন বা কার্ড নেই তারা চাল পায়। সরকারের সুবিধা পায় ভ্যানচালক ও রিকশাচালকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইলিশ ধরছে এমন এক জেলে কালবেলাকে বলেন, বিগত সময়ে ৮০ কেজি করে চাল দেওয়া হলেও এখন দিচ্ছে ২৫ কেজি। এই সামান্য চালে ২২ দিন কীভাবে চলে? পরিবার- পরিজন নিয়ে ধার-দেনা করে খুব কষ্টে চলতে হচ্ছে। সহযোগিতা না পেয়ে মাছ ধরছি।
দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জে এম সিরাজুল কবির কালবেলাকে বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় আমাদের অভিযান চলছে এবং এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাকির হোসেন কালবেলাকে বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধে পদ্মায় অভিযান পরিচালনা করে আসছে প্রশাসন। দুর্গম এলাকায় ইলিশ ধরার খবর পেয়েছি। আমরা এসব এলাকায়ও দ্রুতই অভিযান চালাব।
জেলা মৎস্য অফিসার বলেন, ইলিশ ধরার অপরাধে এখন পর্যন্ত জেলার ৩০ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। ২৪ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছ। বাকিদের জরিমানা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন