গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামে একটি কারখানায় আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারী বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে কাশিমপুর-কোনাবাড়ী রোডের ওই কারখানার গেট ভেঙে উত্তেজিত শ্রমিকরা ভিতরে প্রবেশ করে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মারধর করেন।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস জানায়, আন্দোলনের কারণে গাজীপুরের বেশিরভাগ পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে। কিন্তু এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামে ওই কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করছিল। খবরটি আন্দোলনকারী শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পরে শ্রমিকরা ওই কারখানার সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানায় আন্দোলনকারীরা। কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ না দেওয়ায় আন্দোলনকারীরা গেট ভেটে ভেতরে প্রবেশ করে কারখানার শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের মারধর করে। এক পর্যায়ে কারখানায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়ে। খবর পেয়ে কাশিমপু ডিবিএল ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল-আরেফিন জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
কোনাবাড়ী থানার ওসি কালবেলাকে বলেন, আগুন লাগা কারখানাটি চিত্রনায়ক অনন্ত জলিলের মালিকানাধীন কিনা জানা যায়নি। তবে এটি এবিএম ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি কারখানা।
এ প্রসঙ্গে চিত্রনায়ক অনন্ত জলিল কালবেলাকে বলেন, এটা আমার ফ্যাক্টরি না। আমার ফ্যাক্টরি সাভারের হেমায়েতপুরে।
এর আগে বেতন বাড়ানোর দাবিতে সপ্তম দিনের মতো চলমান আন্দোলনে দুপুর দেড়টার দিকে টঙ্গীতে রাসেল হাওলাদার নামে এক শ্রমিক নিহত হন। আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি, তিনি পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে পুলিশ জানায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাসেলের মৃত্যু হয়েছে।
দুপুরে পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, বেতন বৃদ্ধির দাবিতে টানা সপ্তম দিনের মতো সোমবারও গাজীপুরে আন্দোলনে নামেন শ্রমিকরা। এদিন সকাল ৯টা থেকে ভোগড়া বাইপাসের আশপাশের এলাকার বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করে। এ সময় তারা কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর চালিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে শ্রমিকরা ছত্রভঙ্গ হয়ে মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় উত্তেজিত একদল শ্রমিক একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়। শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দুপুর দেড়টার দিকে রাসেল হাওলাদার নামে এক পোশাক শ্রমিক আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় তায়রুন্নেসা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত রাসেল হাওলাদার ঝালকাঠি জেলার বিনাইকাঠি গ্রামের হান্নান হাওলাদারের ছেলে। তিনি কলম্বিয়া এলাকার নূর আলমের বাসার ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে ডিজাইন এক্সপ্রেস কারখানার ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিবি) ইব্রাহীম খান জানান, রাসেল হাওলাদার নামে ওই শ্রমিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মারা গেছেন। দুপুরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য করুন