সাতক্ষীরার তালায় মিজান-শাহীন চক্রের তাণ্ডবে তিন গ্রাম পুরুষশূন্য হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তালা সদর ইউনিয়নের শাহাপুর-ভায়ড়া ও আগোড়ঝাড়া গ্রাম রাতে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ছে। ফলে চুরি, ডাকাতিসহ নানাবিধ অপরাধ সংঘঠিত হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তালা সদর ইউনিয়নের ছয় নম্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত তিনটি গ্রামে সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করছে বুদু মেম্বারের ছেলে শাহিন ও তার ভাই মিজানুর রহমান। তাদের নেতৃত্বে এই গ্রুপে সক্রিয় আছে, আজিজ মোল্যার ছেলে তৈয়েবুর মোল্যা, চেনে মোড়লের ছেলে আজিজুর মোড়ল হাজি, শাহাপুর গ্রামের কামরুল মোড়লের ছেলে সজীব মোড়ল, আকবরের ছেলে সাত্তারসহ কয়েকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইতোপূর্বেই স্থানীয়দের বিভিন্ন ভয়-ভীতি ও হুমকি-ধমকি দিয়ে ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে চক্রটি। সম্প্রতি বিএনপি-জামায়াতের ২৮ তারিখের কর্মসূচির পর থেকে ওই সব একই ব্যক্তির কাছ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে চক্রটি। এরইমধ্যে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভায়রা শেখ পাড়ার যুব সংহতির তালা ৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি বাপ্পী শেখকে আটক করায় চক্রটি। পুলিশ প্রশাসন তদন্ত করে জানতে পারে বাপ্পী শেখ জাতীয় পার্টির রাজনীতির সাথে জড়িত। এ সত্যতা জানতে পেরে বাপ্পী শেখকে ছেড়ে দেয় তালা থানার ওসি। এর জের ধরে ৩১ অক্টোবর বাপ্পি ও তার পিতা মাহবুবুরকে শাহাপুর বাজারে বেধড়ক মারপিট করে মিজান-শাহিনের নেতৃত্বে চীনে মোড়লের ছেলে আজিজুর রহমান হাজি, সাহাপুর গ্রামের সজীব মোড়ল, আকবরের ছেলে সাত্তারসহ আরও কয়েকজন। তাছাড়া গত ১ নভেম্বর বুধবার শাহাপুর বাজারে শান্তি সমাবেশে বক্তৃতাকালে বিএনপির ক্যাডার বর্তমান ছাত্রদল থেকে আওয়ামী লীগ বনে যাওয়া সজিব মোড়ল মাইকে হুমকি দেয়। সেখানে মাহবুবুর শেখ ও তার ছেলে বাপ্পী শেখকে পাওয়া যাবে সেইখানে হাত-পা ভেঙে ফেলা হবে। এই ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিলে মাহবুবুর শেখ ও তার একমাত্র পুত্র বাপ্পী শেখ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়।
তালা উপজেলার তালা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুব সংহতির সিনিয়র সহসভাপতি বাপি জানায়, নির্বাচন পূর্ববর্তী অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে শাহিনুর রহমান ও মিজানুর রহমান তার বাবার কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে অপারগতা জানালে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাকে আটক করায় তারা। ব্যাপক যাচাইবাছাই করার পর যুব সংহতির কর্মী পরিচয় পেয়ে আমাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে, শাহীন, মিজান, সজীব মোড়ল, আজিজ মোড়ল ওরফে হাজি ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী তাকে ও তার বাবার ওপর হামলা করে আহত করে। শুধু তারাই না ভায়ড়া শাহাপুরসহ আশপাশের তিনটি গ্রামের পুরুষরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভিটে ছাড়া। এই চক্রটি সাহাপুর গ্রামের সিদ্দিক শেখ চা বিক্রেতা তার চায়ের দোকান সন্ত্রাসী তাণ্ডব চালিয়ে বন্ধ করে দেয়। তালা থানার ওসি সাহেবের সহযোগিতায় ৮ দিন পর দোকানটি গত শুক্রবার দোকানটি খুলেছে।
তালা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, তালা উপজেলা জাতীয় পার্টির শক্তিশালী দুর্গ। আওয়ামী লীগ আমাদের শরিক দল হলেও তালা উপজেলায় জাতীয় পার্টিকে দুর্বল করার জন্য জাতীয় পার্টি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। অন্যদিকে মিজানুর রহমানের কথিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে রাতে ওই এলাকায় পুলিশ টহল কালে মিজান খাঁ মাঝেমধ্যে তার কথিত অফিসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চা-চক্রের আয়োজনে করে বসান। পুলিশের সরল বিশ্বাসে চা খাওয়ার বিষয়টি পুঁজি করে স্থানীয়দের মিথ্যা ভয়ভীতি দেখিয়ে মিজানুর ও শাহিনরা মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি করে ফুলে ফেঁপে মোটাতাজা হয়েছে। ইতোমধ্যে সিদ্দিক বাজাদার লেপ সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করে, তার সাথে শাহিন মিজানের মনোমালিন্য হয়। এসময় সিদ্দিক বাজাদার গ্রেপ্তার হয়ে নাশকতা মামলায় চালান হলে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মিজান শাহিন চক্র বর্তমান ডিএসবির তালিকায় সাহাপুর, ভায়ড়া, আগোলঝাড়া তিন গ্রামের জাতীয় পার্টি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থকদের নাম দিয়ে পরিপূর্ণ করেছে। তা ছাড়া তালা সদর ইউনায়নের ডিএসবির তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ। জাতীয় পার্টিসহ অগনিত নিরীহ মানুষের নামে ডিএসবির তালিকাভুক্ত বলে প্রচার দিলে শাহাপুর-ভায়ড়া-আগোলঝাড়া গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। দ্রুত এর সুরাহা না হলে তালা উপজেলা জাতীয় পার্টি কঠিন কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ভায়ড়া শেখপাড়ার মাহবুবুর রহমান, তার পুত্র বাপ্পী শেখ ও তার কন্যা তালা মহিলা কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে অধ্যায়নরত মাহফুজা আক্তার তুলিকে জিম্মি করে। তা ছাড়া শাহাপুর বাজারে প্রকাশ্যে লোকজনের সামনে ৩০ অক্টোবর রাত্র অনুমান ৮টার সময় মাহবুবুর শেখ ও বাপ্পী শেখ, কে মারপিট করলে পিতা-পুত্র দৌড়ে পালিয়ে যায়। তারা ভিটেবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
শাহাপুর গ্রামের নছিম উদ্দীন শেখের পুত্র সিদ্দিক সেখের চায়ের দোকান বন্ধ করে তাকে তাড়িয়ে দেয় এবং হুমকি দেয় দোকান খুললে হাত-পা ভেঙে দিবে। সিদ্দিক শেখ থানায় হাজির হয়ে মৌখিকভাবে তালা থানার ওসি মো. মোমিনুল ইসলামকে জানালে তিনি সিদ্দিক শেখকে তার দোকান খোলার জন্য নির্দেশ দেন। ফলে ৮ দিন পর শুক্রবার (৩ নভেম্বর) দোকানটি খুলেছেন।
জাতীয় পার্টিসহ সাধারণ জনগণকে হয়রানি ও চাঁদাবাজির বিষয়টি তালা থানার ওসি মোমিনুল ইসলামকে জানানো হলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত শাহিনকে থানাতে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় শাহিন ঘটনা অস্বীকার করেন।
এ সকল বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মিজানুর রহমান সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। তবে শাহিনুর রহমান জানান, পুরো ঘটনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমরা শরিক দলের কোনো নেতাকর্মীদের হয়রানি করিনি।
তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুল ইসলাম জানান, যারা নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে যাচাইবাছাই করে তাদের আটক করা হচ্ছে। জাতীয় পার্টির কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন