ছবি দেখে পুরোদস্তুর শীতকাল মনে হলেও বাংলা পঞ্জিকায় আজ ২২ কার্তিক। উত্তরের হিমেল বাতাস, ঘন কুয়াশা আর ধানের পাতায় জমে থাকা শিশির জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।
পার্বত্য জনপদ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় দেখা মিলেছে শীতের কুয়াশা। বিকেল থেকে কুয়াশায় মুখ ঢাকছে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। রাতভর টুপটাপ কুয়াশা ঝরছে। সকালের পরে কুয়াশা কেটে উঁকি দিচ্ছে সূর্য। এরই মধ্যে সকালের সূর্যের আলোতে ভোরের শিশির মুক্তার চমক ছড়িয়ে জানান দিচ্ছে, এই বুঝি শীত এলো রে।
মাটিরাঙ্গায় তাপমাত্রা কমে বইছে কুয়াশা। হঠাৎ আবহাওয়ায় পরিবর্তন। কদিন আগেও যেখানে বেশ গরম অনুভূত ছিল। অথচ এবারই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গরমের রেকর্ড দখলে নিয়েছে। আর সেই আবহাওয়ায় এখন শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। শীত আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ভোরবেলা পড়ছে শিশির। পাশাপাশি হালকা শীতের কাপড় পরে শীতকে বরণ করতে দেখা গেছে অনেককে। সকালবেলা মক্তব পড়তে যাওয়া কচিকাঁচা শিক্ষার্থীরা ঠান্ডা লাগার ভয়ে গরম কাপড় পড়ে যেতে দেখে গেছে।
আজ ২২ কার্তিক হলেও হিসাব অনুযায়ী আরও পরে শীত অনুভব হবার কথা থাকলেও আগেভাগেই পাহাড়ে শীত অনুভূত হচ্ছে। তাছাড়া কার্তিকের শেষের দিক থেকে শুরু হয়ে আগ্রহায়ণে সারাদেশে একযোগে ধানকাটা শুরু হয়। ধান কাটার পরপরই গ্রাম বাংলায় শুরু হয় নবান্ন উৎসব। শিশিরভেজা সকাল আর বিলুপ্তপ্রায় খেজুরের মিষ্টি রসের মিতালি শুরু হয়। সকাল বেলা খেজুরের রসের পিন্নি, নবান্নের নতুন চালের পিঠা খেতে খেতে আড্ডা দেয়া এ যেন গ্রামে বাংলার চিরাচরিত প্রথা।
যদিও ঋতুর হিসেব অনুযায়ী শীত আসতে এখনও বেশ সময় বাকি। তবে ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে গ্রামবাংলায় অনেক আগেই শীতের দেখা পাওয়া যায়। তা ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পাহাড়ে শীতের প্রভাব তুলনামূলকভাবে বেশিই অনুভব হয়। এ বছর শীতের আগমন কার্তিকেই। প্রতিদিন রাত ও ভোর থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পথঘাট ও জনজীবন, সড়কে যানবাহনগুলো দুর্ঘটনা এড়াতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। সকালে পথঘাট হালকা কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায়। কৃষক মাঠে আগাম জাতের ধান কেটে ফেলে রাখার দৃশ্য দেখতে দারুণ লাগে। তা ছাড়া আমন ধানের পাতা আর ঘাসের ওপর ঝরছে শিশির কণা। শিশির ভেঙে কৃষক ছুটে যান সবুজ ধানের ক্ষেতে। রোদের আলোয় ঘাসের ওপর ঝরে পড়া সোনালি শিশির বিন্দু চকচক করে ওঠে।
এদিকে শীতের আগমনী বার্তায় প্রস্তুতি শুরু করেছে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ। যত্নে রাখা গরম কাপড় বের করতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে। সন্ধ্যায় ও ভোরে হাঁটাহাঁটি শেষে জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতার গল্প জমছে চায়ের আড্ডা।
মাটিরাঙ্গা ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার ইতিহাসের প্রভাষক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করেই বেশ কুয়াশা ও হালকা শীত অনুভুত হচ্ছে। শিতের সিজনটা অল্প সময়ের জন্য আসলেও আমরা সেটা বেশ ভালো করেই উপভোগ করি। শীতকালীন বিভিন্ন শাক সব্জি, বাহারি রকমারি পিঠা পুলি পাহাড়ের জনসাধারণের কাছে বেশ জনপ্রিয়। মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন জানান, আশ্বিন মাসের শেষে মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় থাকায় ও উত্তরীয় বায়ুর কিছুটা প্রভাব থাকায় শেষ রাতে শীত নেমে এসে ঠান্ডা অনুভূত হয়। বিশেষ করে মৌসুমি বায়ু যখন বাংলাদেশের ওপর আর সক্রিয় থাকবে না তখন হালকা ধরনের শীত পড়বে।
মন্তব্য করুন