ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ইঁদুরের পেটে যাচ্ছে কুমিল্লার আমন চাষির স্বপ্ন

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার আমন ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ। ছবি : কালবেলা
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার আমন ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ। ছবি : কালবেলা

চলতি আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছিলেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার আমন চাষিরা। তবে এরই মধ্যে ধানক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দেওয়ায় সেই স্বপ্ন এখন ধূলিসাৎ হওয়ার পখে। উপজেলার কিছু কিছু আমন মাঠে ধানের গাছ কাটতে শুরু করেছে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির ইঁদুর। ফলে ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখা চাষিদের স্বপ্ন যাচ্ছে ইঁদুরের পেটে। ওইসব জমিতে ইঁদুর দমনে নানা কৌশল অবলম্বন করেও তেমন উপকৃত হচ্ছেন না বলে জানান চাষিরা। এতে ওইসব আমন চাষিরা মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

এদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, আমন মৌসুমে ইঁদুর দমনের উপযুক্ত সময় ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক। কারণ এ সময়ে মাঠে ইঁদুরের সংখ্যা কম থাকে। জমিতে পানি থাকে বলে ইঁদুর মাঠের উঁচু স্থানে, রেলসড়ক ও মহাসড়ক, ফসলের মাঠের কাছাকাছি বাঁধে এবং পুকুরের পাড়ে, ধানের জমির পাশে স্তূপকৃত আগাছা বা কচুরিপানার দলে অল্প জায়গায় অবস্থান করে। মাঠে প্রচুর খাদ্য না থাকায় ইঁদুর সহজেই এ সময় বিষটোপ খেয়ে থাকে। আমন ফসল ক্ষতি করার আগেই ইঁদুর মারতে পারলে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি কম হয় এবং ফসলের ক্ষতিও অনেক কম হয়ে থাকে। ধান রোপণের সময় ও রোপণের ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে ধানের জমি ও আশপাশের এলাকার ইঁদুর দমনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। জমিতে খুঁটি গেড়ে পলিথিন বেধে দিলেও ইঁদুরের আক্রমণ অনেকাংশে কমে আসে।

ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতির ধরন, ব্যাপকতা ও দমন প্রক্রিয়া অন্যান্য বালাই থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও কৌশলগত। তাই স্থান-কাল পাত্রভেদে কৌশলের সঠিক ও সমন্বিত দমন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ইঁদুর দমন করতে হবে। এতে করে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি, ইঁদুরবাহিত রোগ ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব হবে। তবে ইঁদুরকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন।

সবাই মিলে একযোগে পুরো মাঠের বেশি জায়গার ইঁদুর মারলে ফসল রক্ষা পায় ও ইঁদুরের সংখ্যা পরে বাড়তে পারে না। এ জন্যই সরকারিভাবে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে এবং এটাকে সামাজিকভাবে আরও কার্যকরী করতে হবে।

ইঁদুর দমন পদ্ধতিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। অরাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন, রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন ও জৈবিক পদ্ধতিতে দমন। এ পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করে ইঁদুর দমন করার কথা বলছেন স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর। ধানের জমিতে ইঁদুর নিধনে মাঠপর্যায়ে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে রোপা আমনের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কিছু কিছু আমন ধানের ক্ষেতের কিছু কিছু জায়গায় ধানগাছ কেউ যেন ধারালো কাঁচি দিয়ে কেটে দিয়েছে। ধানের লকলকে সবুজ গাছ হলদে হয়ে পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বসতবাড়ির আশপাশের মাঠগুলোতে ইঁদুরের আক্রমণ অনেকাংশে বেশি। অনেক চাষি ইঁদুর মারার জন্য বিভিন্ন কৌশল ও ওষুধ ব্যবহার করেও তেমন ফল পাচ্ছেন না। এ বছর মাঠের ধান ভালো হলেও ইঁদুরের উৎপাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। এ নিয়ে ওই এলাকার চাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

উপজেলার চন্ডিপুর এলাকার আমন চাষি মন্তু মিয়া, মালাপাড়া এলাকার ময়নল হোসেন, দুলালপুর এলাকার জসিম, সিদলাই এলাকার মুরশেদ আলম ও চান্দলা এলাকার নূরে আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর আমন মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। আমন চাষিদের নিরলস যত্নে ও শ্রমে সবুজে ভরে উঠছে পুরো আমন মাঠ। আমন চাষিরা এ বছর ভালো ফলনের স্বপ্নে বিভোর। ঠিক এরইমধ্যে উপজেলার কিছু কিছু ক্ষেতে দেখা দিয়েছে ইঁদুরের উপদ্রব।

এমন সময় ক্ষেতের কাঁচা ধানে ইঁদুরের আক্রমণে যেন আমন চাষিদের স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে। কাঁচা ধানের গাছ ইঁদুর কেটে দেওয়ায় নতুন করে চিন্তায় পড়েছেন তারা। ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষা পেতে কীটনাশক ব্যবহারসহ সব ধরনের কৌশল অবলম্বন করেও পুরোপুরি সফল হচ্ছেন না তারা। ফলে আমনের বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখা চাষিদের স্বপ্ন চলে যাচ্ছে ইঁদুরের পেটে। এতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা।

উপজেলার রামনগর গ্রামের আমন চাষি নবীর হোসেন বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বেশিভাগ জমিতেই আমনের চাষ করেছি। আমাদের স্বপ্ন ছিল এ বছর আমন ধানের ফলন ভালো হবে, ধান চাষ করে বাড়তি ফসল হিসেবে ঘরে তুলবো। কিন্তু আমাদের সে স্বপ্নে হানা দিয়েছে ইঁদুর। ইঁদুর দমনে নানা কৌশল অবলম্বন করছি।

দীর্ঘভূমি গ্রামের আমন চাষি ইউনুস মিয়া বলেন, মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে এবার ৩০ শতক জমিতে আমনের চাষ করেছি। এ বছর ধানের ভালো ফলন হবে এই আশায় ছিলাম। কিন্ত হঠাৎ করে ফলন আসার আগেই ক্ষেতে হানা দিয়েছে ইঁদুর। ইঁদুর দমনে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ মতো নানা কৌশল ব্যবহার করছি, তবুও পুরোপুরিভাবে ইঁদুর দমন সম্ভব হচ্ছে না। দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, আমি মাত্র কয়েকদিন হলো এ উপজেলায় যোগদান করেছি। কোথাও কোথাও ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত না। কারণ আমি নতুন এসেছি, এখনও মাঠ পরিদর্শন শুরু করা হয়নি। আমার জানামতে এখানে ইঁদুর নিধন অভিযান করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

২০১৮ সালের নির্বাচনের বদনাম ঘোচাতে চায় পুলিশ : ডিএমপি কমিশনার

ওয়েস্ট হ্যামের বিরুদ্ধে চেলসির বড় জয়

নরসিংদী জেলা সাংবাদিক সমিতি, ঢাকা’র নতুন কমিটিকে সংবর্ধনা

কেইনের হ্যাটট্রিকে লেইপজিগকে উড়িয়ে দিল বায়ার্ন

নিখোঁজের একদিন পর যুবকের মরদেহ মিলল পুকুরে

বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের তারিখ ঘোষণা করলেন ট্রাম্প

এশিয়া কাপ দলে জায়গা পেয়ে সোহানের কৃতজ্ঞতার বার্তা

ঘুষ কেলেঙ্কারিতে পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

প্রবীণদের বিশেষ যত্ন নিয়ে বার্ধক্যের প্রস্তুতি নিন: স্বাস্থ্য সচিব

বিভুরঞ্জন সরকারের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত: রাষ্ট্রদূত আনসারী

১০

লা লিগার কাছে যে অনুরোধ করতে চায় বার্সা

১১

‘নির্বাচনে আমলাদেরকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে’

১২

সাবেক এডিসি শচীন মৌলিক কারাগারে

১৩

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন শনিবার, যেসব বিষয়ে আলোচনা

১৪

সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের শানে রিসালাত সম্মেলন

১৫

শেষ দিনেও ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে মতামত দেয়নি ৭ রাজনৈতিক দল

১৬

ইউরোপের লিগগুলোতে দল কমানোর প্রস্তাব ব্রাজিল কোচ আনচেলত্তির

১৭

নেপালে মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকের প্রচার, তাসনিম জারার ব্যাখ্যা

১৮

মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে মৃত্যুর মিছিল, তিন বছরে প্রাণ হারান ১৮৩ জন

১৯

স্বর্ণ ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি 

২০
X