দিরাই (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৩৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

অন্ধত্বকে জয় করলেও পথের কাঁটা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

বাঁশ ও বেত দিয়ে পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত অন্ধ হস্তশিল্পী মৃত্যুঞ্জয়। ছবি : কালবেলা
বাঁশ ও বেত দিয়ে পণ্য তৈরিতে ব্যস্ত অন্ধ হস্তশিল্পী মৃত্যুঞ্জয়। ছবি : কালবেলা

সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার করিমপুর ইউনিয়নের পুরাতন কর্ণগাঁও গ্রামের বিরেন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস (৩৪)। ১২ বছর বয়সে চোখে ব্যথা থেকে ধীরে ধীরে বাম চোখের আলো হারান তিনি।কয়েক বছর পর আবার চোখে ব্যথা শুরু হয়। এতে পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান মৃত্যুঞ্জয়। দুচোখে আলো না থাকলেও হার মানেননি অন্ধত্বের কাছে। একাই ধরেন সংসারের হাল। নিজেকে গড়ে তোলেন হস্তশিল্পী হিসেবে। নিপুণ হাতে তৈরি করতে থাকেন টুকরি, কুলা, চাটাই, খালুইসহ বাঁশ ও বেতের নানান জিনিস। চোখে দেখতে না পাওয়া ছেলেটি হাতের কাজ করে সংসারের খরচ বহন করতে থাকে। স্ত্রী, মা, বাবা, ভাইকে নিয়ে ভালোই চলছিল তাদের। অন্ধত্বকে জয় করলেও বর্তমানে সংসার চালাতে পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি।

দৈনিক কালবেলাকে হস্তশিল্পী মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারিনি বলে কম বয়সেই অন্ধ হয়ে যাই। কিন্তু কোনো প্রতিবন্ধকতা আমাকে আটকে রাখতে পারেনি। আমি অন্ধ হলেও পরিবারের বোঝা হয়ে থাকিনি। যাইনি ভিক্ষাবৃত্তিতে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে বাঁশ ও বেতের টুকরি, কুলা, চাটাই তৈরি করতে থাকি আর এ থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই পরিবার চালাই। এভাবেই আমাদের পরিবার চলে আসছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে এখন আর চলতে পারছিনা। মানুষ এখন আর আগেরমত টুকরি, কুলা, চাটাই নিতে বাড়িতে আসেনা। বাঁশের দাম বেশি তাই এগুলো বেশি দামে বিক্রি করতে হয় বলে আগের মত ক্রেতারা আর আসেনা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষ খেয়ে বেঁচে থাকতে হিমসিম খাচ্ছে। আর আমার ক্রেতাদের একটা বিরাট অংশ এই সাধারণ মানুষ। তারা অতি প্রয়োজন ছাড়া এখন আর এসব কিনতে আসে না।

তিনি বলেন, এখন মা, বাবা, ভাই, স্ত্রী নিয়ে চলতে আমার জন্য বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। যে টাকা রোজি করি তা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসই কিনতে পারিনা। একটা কিনলে আরেকটা কিনতে পারিনা।

কালবেলাকে মৃত্যুঞ্জয়ের পিতা বিরেন্দ্র বিশ্বাস (৭৩) বলেন, ১২ বছর বয়সে মৃত্যুঞ্জয়ের দুই চোখে ব্যথা হতো। চিকিৎসা করে কোনো লাভ হয়নি। তার দুটি চোখই অন্ধ হয়ে যায়। আমার কোনো জায়গা জমি নাই যে কৃষিকাজ করে পরিবার চালাব। মৃত্যুঞ্জয় বাঁশ বেতের কাজ শুরু করলে কোন রকমে চলছিলাম। কিন্তু বর্তমানে জিনিস পাতির যে দাম বাড়ছে এসবে আর পোশে না। বড় অসহায় অবস্থায় আছি এখন।

প্রতিবেশী নিরেশ দেবনাথ বলেন, মৃত্যুঞ্জয় আমাদের সাথে ফুটবল খেলত। কিন্তু হঠাৎ তার মাথাব্যথা দেখা দেয়। একসময় সে অন্ধ হয়ে যায়। তারপর সে বাঁশ ও বেতের কাজ শুরু করে। সে যে ভাবে সুন্দর করে বাঁশবেত দিয়ে টুকরি,কুলা, চাটাই তৈরি করতে পারে আমরা সুস্থ মানুষও সেই রকম সুন্দর করতে পারি না।

কালবেলাকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আলম চৌধুরী বলেন, চোখ হারালেও জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে কাজ করে যাচ্ছে মৃত্যুঞ্জয়। প্রতিবন্ধকতা দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। অভাব-অনটনের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছে কিন্তু ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করেনি। প্রতিবন্ধকতা কখনো সাফল্যের অন্তরায় হতে পারে না। তার উদাহরণ মৃত্যুঞ্জয়।

তিনি আরও বলেন, একসময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করত কিন্তু এখন আর সেটি করেনা। তাছাড়া দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এই শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ, দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। প্লাস্টিকসামগ্রীর কদর বেড়ে যাওয়া এই কুটির শিল্পের চাহিদা এখন আর নেই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ আটক ৪

ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার

আ.লীগ নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পড়ে ছিল ৯ রাউন্ড গুলির খোসা

উত্তরায় যুব-স্বেচ্ছাসেবক ও ছাত্রদলের অবস্থান

জবি ছাত্রী হলে ছাত্রদলের উপহার সামগ্রী বিতরণ

চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার কফিল উদ্দিনের

বরগুনায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ

কক্সবাজারে মার্কেটে আগুন

৮ দলের কর্মসূচি নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পোস্ট

চট্টগ্রামে বিজিবি মোতায়েন, সর্বোচ্চ সতর্কতায় পুলিশ

১০

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নদীগুলোর নাব্যতা পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ নেবে : বাচ্চু

১১

নিক্সনের গানম্যানের নেতৃত্বে তৈরি হচ্ছিল পেট্রোল বোমা ও ককটেল : পুলিশ

১২

দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন

১৩

অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর পাশে ছাত্রদল নেতা দয়াল

১৪

একজন উপদেষ্টা ধানমন্ডিতে ভোটার হতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন : ব্যারিস্টার অসীম

১৫

‘গণভোটের চেয়ে আলুচাষিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়া বেশি প্রয়োজন’

১৬

খতমে নবুওয়তের মহাসম্মেলন সফলে ঢাকায় গণমিছিল

১৭

চলন্ত পিকআপ থেকে ককটেল বিস্ফোরণ

১৮

ইস্তানবুল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড মিরপুর শাখার উদ্বোধন

১৯

ধানের শীষে ভোট দিলে জনগণ নিরাপদে থাকবে : মাসুদুজ্জামান

২০
X