কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিভিন্ন জাতের কমলা ও মাল্টার ভালো ফলন পেয়েছেন মাঈদুল ইসলাম যুবরাজ। এতে এ মৌসুমে লক্ষাধিক টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। যুবরাজ উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের রাজারাম গ্রামের আব্দুল আজিজ মিয়ার ছেলে। বর্তমানে ৪০ শতক জমিতে দুই শতাধিক কমলা ও মাল্টা গাছ লাগিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন বাহারী রংয়ের কমলা ও মাল্টা ঝুলছে তার গাছে। চারা লাগানোর মাত্র তিন বছরের মাথায় গাছে কমলা আসতে শুরু করে। তার বাগানের বয়স পাঁচ বছর।
গত বছর থেকে তিনি বাণিজ্যিকভাবে কমলা ও মাল্টা বাজারজাত শুরু করেন। আর মাত্র কয়েক দিন পরেই বাগান থেকে প্রায় ২০-২৫ মণ কমলা ও মাল্টা বিক্রি করার আশা করছেন তিনি। যা বর্তমান কমলার বাজার মূল্যে প্রায় লক্ষাধিক টাকা। ফলে উৎপাদন ব্যয় বাদে দ্বিগুণ লাভ হবে বলে জানিয়েছেন এ ফলচাষি।
মাঈদুল ইসলাম একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার পাশাপাশি বাবার জমিতে সমন্বিত ফলের চাষ শুরু করেন। প্রায় এক একর জমিতে রয়েছে দেশি-বিদেশি নানান জাতের ফলের গাছ। আম, মাল্টা, আঙুর, লটকন, পেয়ারা, ড্রাগন ও আজোয়া খেজুর চাষের পাশাপাশি কমলা চাষের উদ্যোগও নেন তিনি।
প্রথমে ঝিনাইদহ শহর থেকে ৩০টি চায়না ঝুড়ি কমলা জাতের গাছ সংগ্রহ করেন তিনি। পর্যাক্রমে ভারত থেকে বিভিন্ন জাতের কমলা ও মাল্টার চারা সংগ্রহ করে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ টি চারা রোপণ করেছেন। এ ছাড়া সংগ্রহকৃত গাছ থেকে কলম পদ্ধতি ব্যবহার করে ১০ শতক জমিতে ২ হাজার কমলা ও মাল্টা গাছের কলম চারা রোপণ করেন। কলমকৃত গাছের চারা কয়েক দিনের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি শুরু হবে।
এদিকে প্রথম দিকে রোপণ করা কমলা ও মাল্টা গাছের মধ্যে প্রায় সব গাছ থেকে কমলা ও মাল্টা পেতে শুরু করেছেন। বর্তমানে তিনি বাণিজ্যিকভাবে চাষ ও আয়ের স্বপ্ন দেখছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলা বাগানে বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই। সময়মতো জৈব সার, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে ব্যবহার করে কমলাগাছ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যায় যা প্রতি বছর দ্বিগুণ ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মাঈদুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি চাকরি শিক্ষকতার পাশাপাশি আমি কৃষিতে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে এ পথ বেছে নেই। কমলা চাষের পাশাপাশি বাগানে বিভিন্ন রকমের ফলের গাছ আছে। তবে বাজারে চাহিদা ভালো থাকায় কমলা চাষের আগ্রহ বেড়ে গেছে। আমার জমিতে চায়না ঝুড়ি কমলা ও মাল্টা জাতের দুই শতাধিক গাছ রয়েছে। এটি মিষ্টি জাতের কমলা ও মাল্টা। খেতে অনেক সুস্বাদু। বর্তমান বাগানের বয়স পাঁচ বছর। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখ টাকা খরচ করেছি। গত বছর এ বাগান থেকে আয় হয়েছে ২০ হাজার টাকা। আশা করছি, এ বছর কমলা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে। আগামী বছর দ্বিগুণ টাকা লাভের আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের মানুষের কমলা ও মাল্টার চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যদি দেশের মধ্যে কমলা ও মাল্টার বাণিজ্যিক চাষ করা যায় তাহলে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাইরের দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
উক্ত কমলা ও মাল্টর বাগান দেখতে আসা আনিছুর রহমান, লেয়াকত আলী, দুলু মিয়া ও ইসলামসহ আরও কয়েকজন বলেন, যুবরাজের কমলা-মাল্টার বাগান দেখে খুবই ভালো লেগেছে তাদের। যারা বেসরকারি চাকরি করেন বা কৃষিকাজ করেন তার পাশাপাশি ফল কৃষিতে মনোযোগ দিলে ভালো আয় করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, কমলা ও মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ উপজেলায় কৃষিক্ষেত্রে নতুন এক সম্ভাবনা তৈরি করেছে। যুবরাজের কমলা ও মাল্টার বাগান আমাদের কৃষি অফিস থেকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিয়মিত দেখাশোনা করছেন। তাকে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই, পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষি অফিসের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
মন্তব্য করুন