আতাউর রহমান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৬ এএম
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

কুমিল্লায় বাড়ছে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডে রোগীদের ভিড়। ছবি : কালবেলা
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ডে রোগীদের ভিড়। ছবি : কালবেলা

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় পুরোপুরিভাবে শীত পড়ার আগেই দেখা দিয়েছে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। শিশুরা এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যার ফলে শিশুদের বাড়ছে ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন চিকিৎসালয়ে ভিড় করছেন রোগীসহ রোগীর স্বজনরা।

তবে চিকিৎসকদের দাবি, সরকারিভাবে এই ভাইরাসের টিকা প্রয়োগ না করায় প্রতি বছরই শীতকালে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এতে শিশুরা সহজেই আক্রান্ত হয়। তবে রোটা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে খোলামেলা ও বাসি খাবার এড়িয়ে চলার জোর অনুরোধ করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোটা ভাইরাসে সংক্রামিত হয়ে ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা নিয়ে ৭৯ রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে শতাধিক রোগী।

সরেজমিনে রোববার ও সোমবার (৩ ও ৪ ডিসেম্বর ) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলার অন্যান্য হাসপাতাল ও চিকিৎসালয়ে দেখা গেছে, রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন স্বজনরা। কোনো কোনো রোগীর অবস্থার অবনতি হলে আবার অনেকে তাদের সন্তানকে হাসপাতালেও ভর্তি করাচ্ছেন। উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার আশায় কেউ কেউ পাড়ি জমাচ্ছেন চাঁদপুরের আইসিডিডিআরবিতে। তবে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন অল্প সময়েই। গত ২৫ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোটা ভাইরাসে সংক্রামিত হয়ে ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা নিয়ে ভর্তি হয়েছে ৭৯ রোগী। এদের মধ্যে বেশিভাগ রোগীই শিশু। এ ছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন শতাধিক রোগী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও উপজেলার অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসালয়ে প্রতিদিনই ভিড় করছেন রোগীসহ রোগীর স্বজনরা। তবে দু-তিন দিনের মধ্যেই রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, ডায়রিয়ার প্রধান ওষুধ খাওয়ার স্যালাইন। পাতলা পায়খানাজনিত পানিশূন্যতা পূরণে খাওয়ার স্যালাইনই প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে যদি রোগী অধিক পরিমাণে বমি করে সে ক্ষেত্রে হাসপাতলে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। অন্যথায় বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের।

রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছে সাত মাস বয়সী নোহা। শিশুটির মা জানান, গত দুদিন ধরেই নোহার পাতলা পায়খানা হচ্ছিল। স্থানীয় চিকিৎসক থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। পরে পাতলা পায়খানার পাশাপাশি বমিও শুরু হয় তার। এতে তার শরীর বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করানো হয়। শিরা পথে ফ্লুইড পেয়ে এখন একটু চাঙা হয়েছে সে।

তিন বছরের শিশু আব্দুল্লাহ গত তিন দিন আগে ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ভর্তি হয়। এখন সে অনেকটাই সুস্থ। চিকিৎসক ছাড়পত্র দিলে তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে প্রস্তুত তার স্বজনরা। শিশুটির মা তানিয়া আক্তার জানান, শিশুটির প্রথমে বমি শুরু হয়, স্থানীয় চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে বাড়ি যায় তারা। পরে শিশুটির বমির পাশাপাশি শুরু হয় পাতলা পায়খানা ও জ্বর। এতে অল্প সময়েই শারীরিকভাবে শিশুটি দুর্বল হয়ে পড়ে। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে তার শারীরিক পরিস্থিতি দেখে চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার পরামর্শ দেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন কালবেলাকে বলেন, খাবারের মাধ্যমে এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। শীতকালে এর প্রকোপ দেখা যায়। শীতের সময়ে পানির ব্যবহারে অনেকটা অনীহা থাকে। এজন্য এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, রোটা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত রোগীদের জন্য খাওয়ার স্যালাইন হলো প্রধান চিকিৎসা। তবে শীতে রোটা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে বাইরের খোলাখাবার ও বাসি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। খাওয়ার আগে ভালোমতো সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। আক্রান্ত রোগীদের অধিক পরিমাণে বমি না থাকলে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব। তবে রোগীর যদি বেশি বমি হয় সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টিকাটুলিতে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট

বিয়ের প্রলোভনে ‘ধর্ষণ’, পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার

পরীক্ষায় নকল সরবরাহ করতে যান ছাত্রদল নেতা, অতঃপর...

ছাত্রীদের হলে পুরুষ স্টাফ দিয়ে তল্লাশি

দাম কমলো ইন্টারনেটের

ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ব্যবস্থা কতটা উপযোগী, ভাবার অনুরোধ তারেক রহমানের

বৈষম্যবিরোধী নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

জুলাই নিয়ে পুলিশ সদস্যের ‘আপত্তিকর’ পোস্ট, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ

শাহজালালে বোয়িং বিমানে লাগেজ ট্রলির আঘাত

১০

আখতারকে রংপুর-৪ আসনে এনসিপির প্রার্থী ঘোষণা

১১

মধ্যরাতে বরখাস্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার

১২

‘একসঙ্গে সমুদ্রে নেমে তো গোসল করতে পারব না’

১৩

জুলাই যোদ্ধার তালিকায় এক ব্যক্তির নাম ২ জায়গায়

১৪

বিএনপির অনুষ্ঠানে অপ্রীতিকর ঘটনায় মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

১৫

রাজধানীতে শ্রমজীবী মানুষের মাঝে লায়ন্স ক্লাবের খাবার বিতরণ

১৬

জামায়াত-গণঅধিকার পরিষদের মতবিনিময় / নির্বাচনী জোট গঠনে একমত

১৭

উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, মাদ্রাসার সুপার কারাগারে

১৮

তারেক রহমান নেতৃত্ব না দিলে জুলাই আন্দোলন সফল হতো না : মুরাদ

১৯

চট্টগ্রাম নগরীতে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেপ্তার

২০
X