যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল রহিম শহীদ। সিআইপি এমএ রহিম নামেই সবার কাছে পরিচিত তিনি। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের স্থানীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে মনোনয়ন নেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। তবে তার দাখিলকৃত মনোনয়ন হলফনামায় সমর্থক ভোটার তালিকায় ছিল মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর। ফলে বাতিল করা হয় তার মনোনয়ন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিপুল সম্পদের মালিক এমএ রহিম যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের দ্বৈত নাগরিক, তারপরও তিনি সংসদ সদস্য হতে চান। বিগত ৯ বছর ধরে পরিশোধ করছেন না বকেয়া কর।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, এমএ রহিম মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা। ব্রিটেনে বসবাস করেন দীর্ঘসময় ধরে। নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন লন্ডন বাংলা এগ্রো ও এমআর এগ্রো ট্রেডিং লিমিটেড নামের শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে ৯ বছরে ১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। কিন্তু বিগত ৯ বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক কর প্রদান করছেন না। যার কারণে নাজিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ ১৯ নভেম্বর ২০২৩-২৪/৭১ (৫) স্মারকে মোট ৯ বছরের বকেয়া পাওনা এক কোটি ৩৬ লাখ ৮ হাজার টাকা পরিশোধের জন্য চিঠি পাঠিয়েছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাজিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন আহমদ বলেন, এটা হচ্ছে হোল্ডিং কর। ইউনিয়ন পরিষদ আইন অনুযায়ী, আয়ের সাত শতাংশ কর দিতে হয়। তার প্রতিষ্ঠান ৯ বছর ধরে কর ফাঁকি দিয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের আইনসভার পরিচ্ছেদ ১ এর ৬৬ এর ২- এ বলা হয়েছে, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিক হলে, এমন কেউ সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। তবুও এমএ রহিম এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ১৯৮২ সালে এমএ রহিম ব্রিটেনে যান। সেখানে শুরু করেন ব্যবসা। সেই সময় থেকে তিনি ব্রিটেনের নাগরিক। স্ত্রী ও সন্তানরা সবাই লন্ডনে বসবাস করেন। ব্রিটেনের স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১৯৯০ সালে সেন্ট পিটার ওয়ার্ডে কাউন্সিলরও নির্বাচিত হন। এরপর দেশে এসে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। মৌলভীবাজার শহরের সবুজবাগ এলাকায় এমআর টাওয়ার ১ ও শ্রীমঙ্গল সড়কে এমআর টাওয়ার-২ নামে দুটি ভবন রয়েছে তার। এমআর টাওয়ার-২ এর পাশে রয়েছে নিজের বসবাসের আলিশান বাড়ি। এমএ রহিমের নামে ব্রিটেনে একাধিক কোম্পানি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তিনি এমআর ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মাহি মানি ট্রান্সফার অ্যান্ড ট্রাভেলস লিমিটেড, মাহি প্রপার্টিজ (ইউকে) লিমিটেডের ডিরেক্টর। ২০২০ সালে লন্ডনের শ্রম আদালতে ডিডব্লিউ ইরাসমাসের করা মামলায় (মামলা নাম্বার: ১৬০১১৫৫/১৮ ঠ ) জরিমানার সাজাপ্রাপ্ত হন এমএ রহিম।
এ বিষয়ে এমএ রহিম বলেন, ‘কর ফাঁকির তথ্যটি সঠিক নয়। আপনি ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখেন এটা ভুল তথ্য।’
দ্বৈত নাগরিকত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এর আগেও দুইবার নির্বাচন করেছি।’
মন্তব্য করুন