ব্যাংক নয় মহাজনি সুদের ফাঁদে পড়ে নিঃশ্ব হচ্ছে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরের শত শত পরিবার। ভুক্তভোগীদের অনেকেই এখন ঘুরছেন আদালতের বারান্দায়, কেউ আবার সব হারিয়ে বাড়িছাড়া। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সুদ কারবারিদের নানা প্রলোভনে পড়ে সুদের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। এদিকে পুলিশের অভিযানে সুদ কারবারিদের কয়েকজন ধরা পড়লেও থেমে নেই তাদের দৌরাত্ম্য।
ভুক্তভোগীদের একজন মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট গোলাম হোসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাকরি শেষে একটি ব্যবসা শুরু করেন সার্জেন্ট (অব.) গোলাম হোসেন। একসময় টাকার প্রয়োজনে ওই গ্রামের সুদ কারবারি মনিরুজ্জামান অটোলের কাছে যান তিনি। অটোলের কাছ থেকে ব্যবসার জন্য ঋণ হিসেবে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন। এ জন্য মাসে সুদ গুনতে হতো ৩০ হাজার টাকা। এভাবেই প্রতি মাসে টাকা দিলেও আসল টাকা কখনোই শোধ হয় না। পরে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিলে অটোল তার বিরুদ্ধে ৫ লাখ টাকার প্রতারণা মামলা দায়ের করে। বর্তমানে সব কিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব গোলাম হোসেনের পরিবার। এভাবেই শিবপুর গ্রামের অনেকেই আজ অটোলের সুদের জালে আটকে পড়ে বাড়ি ছাড়া।
বিষয়টি নিয়ে অটোলের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি ও তার ছেলে প্রতিবেদকের ওপর চড়াও হয়। তারা নিজেকে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির আস্থাভাজন বলে দাবি করে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। তবে অটোলের মা তার ছেলে এক সময় সুদ কারবারির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে স্বীকার করেছেন।
এ রকম আরও একজন সুদ কারবারি হলেন হান্না মন্ডল। মুজিবনগর উপজেলার বল্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা রুপালি মন্ডল তার কাছ থেকে সুদে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। মাসে ১০ হাজার টাকা করে তিন বছর শোধ করার পরও ঋণ আর শেষ হয় না। এখন রুপালি মন্ডলের নামে ৫ লাখ টাকার প্রতারণার মামলা দেওয়া হয়েছে। হান্না মন্ডলের প্রতারণার শিকার হয়ে এখন ঘর ছাড়া চম্পা মন্ডল।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে হান্না মন্ডল জানান, ছেলে ও নাতির অসুস্থতার কথা বলে আমার কাছ থেকে দুজন বিভিন্ন সময়ে টাকা ধার নেয়। টাকা না পাওয়ায় আমি আদালতে মামলা করেছি।
পুলিশ বলছে, সুদ কারবারিদের তালিকা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী রাসেল বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত হয়েছি। প্রত্যেকটি ইউনিয়নেই কিছু লোক সুদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা ইতিপূর্বে অভিযান পরিচালনা করে অনেক দলিল ও চেকসহ সুদ ব্যবসায়ীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছি। আমাদের কাছে সুদ ব্যবসায়ীদের একটি তালিকা আছে। সে তালিকা ধরে আমাদের তদন্ত চলমান আছে। এ ছাড়াও আমরা গ্রামবাসীদের সচেতন করছি, কেউ যেন এ সুদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত না হয়ে পড়ে এবং ভুক্তভোগীরা যেন থানায় এসে অভিযোগ করে।’
মন্তব্য করুন