জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার সূর্যবান গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম রানা বলেন, বাড়তি টাকা খরচ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আলু চাষ করে আমাদের কোনো লাভ হয় না। লাভ করে ব্যবসায়ীরা। তার পরও জমি তো ফেলে রাখা যায় না। এবার বীজ, সার, মজুরি, সেচ, কীটনাশক সব কিছুর দাম বেশি। বিঘা প্রতি ৫-৬ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। উৎপাদন খরচের সঙ্গে ফলন এবং আশাতীত দাম না পেলে লোকসানের মুখে পড়তে হয় কৃষককে।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এবার আলুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে বিঘাপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা। গত বছর প্রতি বিঘা জমিতে আলু চাষে খরচ হয়েছিল ২৮ হাজার ৬১৪ টাকা। বীজ সার কীটনাশক শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় বিঘাপ্রতি উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩৩ হাজার ৬১৪ টাকার মতো। জেলায় ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনে এবার কৃষকদের বাড়তি খরচ পড়ছে ১৪৫ কোটি ৫৫ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা।
কৃষি বিভাগের দাবি, সার বীজ ও শ্রমিকের দাম বাড়লেও ভালো দাম থাকায় আলু চাষ করে লোকসানে পড়বে না কৃষকরা।
আর কৃষকরা বলছেন, আমরা আবাদ করেন কৃষক লাভ করেন ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন খরচের সঙ্গে ফলন এবং আশাতীত দাম না পেলে লোকসানের মুখে পড়তে হয় কৃষককে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি মৌসুমে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর জেলায় ৩৮ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমি থেকে আলু চাষ হয়। উৎপাদন হয় ৯ লাখ ২০ হাজার ৭৬০ টন।
গত বছরের তুলনায় এবার রাসায়নিক সারের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। গতবছর বিএডিসির অ্যাস্টেরিক ও ডায়মন্ড জাতের আলু বীজের কেজি ছিল ৪৮। এবার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৮ টাকা। বেসরকারি আলু বীজের দামও চড়া। এসিআই এবং ব্র্যাকের অ্যাস্টেরিক ও ডায়মন্ড জাতের আলু বীজ বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি। গতবছর ছিল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। প্রতি বিঘায় শ্রমিকরা নিচ্ছেন সাড়ে তিন হাজার টাকা। আবার নিড়ানিতে মজুরী ৫০০ টাকা বিঘা। ডিজেলের দাম বেশি হওয়ায় ২ হাজার ৮০০ টাকার পরিবর্তে এবার প্রতি বিঘা জমির চাষ খরচ ৩ হাজার ২০০ টাকা। কীটনাশক এবং পানি সেচের দামও বেড়েছে। এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে এবার আলুর উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩৩ হাজার ৬১৪ টাকা। যেখানে গত বছর খরচ হয়েছিল ২৮ হাজার ৬১৪ টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘায় এবার আলুর উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫ হাজার টাকারও বেশি।
ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী বাজারের সার ও বীজ ডিলার দুলাল মিয়া বলেন, ‘বাজারে সার এবং বীজের কোনো অভাব নেই। দাম বেশি হলেও কৃষকরা চাহিদামত সরবরাহ পেয়ে খুশি।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাহেলা পারভীন বলেন, জেলায় এবার আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর নির্ধারণ করা হয়েছে। আলু বীজ লাগানো প্রায় পর্যায়ে (৯৫ ভাগ)। উৎপাদন খরচ কিছু বেশি হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার বেশি আলু চাষ হবে। গত বছর আলুর দাম ভালো পেয়েছে কৃষক।
মন্তব্য করুন