গোবিন্দ দেব, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:০০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

৯ ডিসেম্বর : জগন্নাথপুর মুক্ত দিবস আজ

জগন্নাথপুর উপজেলা শহীদ মিনার। ছবি : কালবেলা
জগন্নাথপুর উপজেলা শহীদ মিনার। ছবি : কালবেলা

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা মুক্তি দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করে বাংলার দামাল ছেলেরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে জগন্নাথপুরের দামাল ছেলেরা ছাত্র, যুবক, শিক্ষক, কৃষক, আইনজীবী শত্রুমুক্ত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে ৯ ডিসেম্বর এই দিনে জগন্নাথপুর থানা শত্রুমুক্ত হয়েছিল।

স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের বর্বরতম দুটি ঘটনা ঘটে জগন্নাথপুরের শ্রীরামিসি ও রানীগঞ্জে। হানাদারদের নৃশংসতা ও রাজাকারদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন এ অঞ্চলের জনগণ।

একাত্তরের ৩১ আগস্ট শ্রীরামসী ও ১ সেপ্টেম্বর রাণীগঞ্জ বাজারে পাক হানাদাররা চালায় বর্বর এক হত্যাযজ্ঞ। শত শত মানুষকে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করেছে। সেই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড আজও এ অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে উঠে। শ্রীরামসি ও রানীগঞ্জ গণহত্যার পর ৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর ভোরে এসে জগন্নাথপুর পৌঁছায় রাজাকার ও পাক হানাদার বাহিনী।

সেখানে অবস্থানকালে জগন্নাথপুর পাক-হানাদার বাহিনীর মূল ঘাটি হিসেবে চিহ্নিত জগন্নাথপুর থানাতে আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এ সময় মুক্তিবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরাও যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। জগন্নাথপুর বাজারের মির্জা ব্যারিস্টার আব্দুল মতিন মিয়ার বাড়ির দক্ষিণ নিকটে যুদ্ধের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করলে পাক-হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মুক্তিবাহিনীকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। ওই যুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীর পরে মুক্তি বাহিনী পিছু হটে।

পরবর্তীতে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৯ ডিসেম্বর জগন্নাথপুর থানাকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন। সাহসী যুদ্ধাদের কাছে রাজাকার, পাকসেনারা সেদিন আত্মসমর্পণ করে। জগন্নাথপুর থানায় প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার মরহুম মির্জা আব্দুল মতিন। মুক্তিযুদ্ধে এ থানায় গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে মুক্ত হয় জগন্নাথপুর থানা। হাওরের নৌপথে ও সড়কপথে সিলেটের দিকে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি অভিযানে জগন্নাথপুর শত্রুমুক্ত হওয়ায় স্বাধীনতার আকাঙ্খায় দিন অতিবাহিত করা জনতা রাস্তায় নেমে এসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানান। জয় বাংলা স্লোগানে তখন মুখর হয়ে ওঠে জগন্নাথপুর উপজেলা। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণের খবর পেয়ে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী সড়ক ও হাওরপথে পালিয়ে যায়। জগন্নাথপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর পালানোর পথ রেখে বালাট সাব-সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সুনামগঞ্জেকে শত্রুমুক্ত করতে উদ্যোগ নেন। চারটি কোম্পানির মধ্য থেকে আক্রমণের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা প্রস্তুত ছিলেন যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে। মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত ও যৌথ আক্রমণের খবরে ভীতসন্ত্রস্ত পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী জগন্নাথপুর ছেড়ে পালাতে শুরু করে। ৯ ডিসেম্বর ভোরে জয় বাংলা স্লোগানে রাস্তায় নেমে এসে দামাল মুক্তিসেনাদের অভিনন্দন জানায় জনতা। দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ থাকার পর হাজার হাজার নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে এসে মুক্তির উল্লাসে মেতে ওঠেন। এভাবেই শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধা সময় পাইলগাওঁ ইউনিয়নে স্বাধীন বাজার এলাকায় রাজাকারদের ভূমিকায় মনমোহিনীর বাবা-মাকে হত্যা করা হয়। সেই সময় মনমোহিনীর বুকে গুলি লাগে। আজও বুকে গুলি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য দারে দারে ঘুরছেন। আজও স্বীকৃতি পাননি। তিনি প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অনেক আবেদন দিয়েছেন।

মনমোহিনী বলেন, বুকে গুলি নিয়ে আজও বেঁচে আছি। মৃত্যুর সময় আসছে। বাবা মাকে হারিয়েছি। আমি বীরাঙ্গনা না স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অনেক আবেদন করেছি, আজ পর্যন্ত স্বীকৃতি পাইনি।

জগন্নাথপুর উপজেলা সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কায়ুইম বলেন, ৯ ডিসেম্বর জগন্নাথপুর থানাকে আমরা শত্রুমুক্ত করি। এই দিন এলে শরীরের ঝাকি দিয়ে ওঠে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জামায়াত আমিরের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনারের সৌজন্য সাক্ষাৎ

বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে ছিটকে গেলেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা

আরব আমিরাতে ২৫ বন্দির মুক্তির বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ

হত্যার পর মা-বাবাকে ঘরের ভেতরে পুঁতে রাখেন ছেলে

শান্তি রক্ষা মিশন নিয়ে বাংলাদেশকে দুঃসংবাদ দিল জাতিসংঘ

শাবিপ্রবির ২৫ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, প্রতিবাদে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

পরকীয়া সন্দেহে গলা কেটে স্ত্রীকে হত্যা

গরু ছাড়াই ঘানি টানা সেই প্রবীণ দম্পতির পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের যান চলাচল

টাইফয়েডের টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ ও জীবনরক্ষাকারী : সিভিল সার্জন

১০

স্বর্ণের পর রুপার দামেও নতুন ইতিহাস

১১

সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা

১২

যে সমীকরণ মিললে তিন ম্যাচ হেরেও সেমিফাইনালে উঠতে পারে পাকিস্তান

১৩

৪৯তম বিসিএসের প্রবেশপত্র নিয়ে পিএসসির জরুরি নির্দেশনা

১৪

ফাঁদ দিয়ে বক শিকার, যুবকের কারাদণ্ড

১৫

ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করলেন মা

১৬

পাঁচ ইসলামী ব্যাংক এক করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ

১৭

নারীদের বন্ধ্যত্বের সাধারণ ৬ লক্ষণ, যা জানা জরুরি

১৮

পদ্মায় প্রকাশ্যে ইলিশ শিকার, মিলছে হোম ডেলিভারিতে

১৯

টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাংকিংয়ে গবেষণায় মাভাবিপ্রবি ৭৪৬তম

২০
X