বশির হোসেন, খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:২৯ এএম
অনলাইন সংস্করণ

খুলনার সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ

অধ্যক্ষকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনা। ছবি : সংগৃহীত
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনা। ছবি : সংগৃহীত

প্রশিক্ষণার্থীদের অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিষ্ঠানের শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করা, নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের গায়ে হাত তোলাসহ নানান বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ খুলনার একমাত্র সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।প্রতিষ্ঠানকে কুক্ষিগত করে নিজ সম্পত্তি বানিয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন। অনিয়ম ও দুর্নীতি ও কর্মচারী লাঞ্ছিত হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক অভিযোগ এমনকি মামলা দায়ের করা হলেও বহাল তবিয়তে চলছে তার কর্মকাণ্ড। এসবের কারণে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বৃহৎ অংশ আন্দোলন করছে তাকে অপসারণের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনার খানজাহান আলী থানার তেলিগাতী কুয়েট রোডে অবস্থিত খুলনা সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলামকে নিয়ে অভিযোগের যেন শেষ নেই। ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই নানানিধ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন তিনি। ক্ষমতার দম্ভ এবং ব্যক্তিগত অসদাচরণের কারণে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা শুরু থেকে তার উপর ছিল নাখোশ। প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালককে মারধর, প্রতিষ্ঠানের সাবেক এক প্রশিক্ষককে হত্যা করে লাশ গুম, প্রতিষ্ঠানের মালামাল যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করা প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে পরিচালনা না করারসহ নানাবিধ অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে প্রতিষ্ঠানের গাছ বিক্রির। প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণের কাঁচামাল সরবরাহ না করে সেই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগগুলো নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষক, কর্মচারী এবং প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। যার বিস্ফোরণ ঘটে গত বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর)। এ দিন তার কাছে হেনস্তা হওয়া প্রশিক্ষক, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করে তাকে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের পদ থেকে দ্রুত অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা চলছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির এক গাড়িচালককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানের গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ না করিয়ে ভাউচার করে সমন্বয় করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ২৩ নভেম্বর জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নির্মাণাধীন নতুন ভবনের কাজ শুরুহওয়ার পূর্বে প্রতিষ্ঠানের ১৯৫টি গাছ ভেকু দিয়ে কেটে ফেলে কিছু গাছ বিক্রির অভিযোগে খুলনা জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন স্থানীয় বাসিন্দা কাজী আরিফুল ইসলাম বকুলসহ স্থানীয়রা। অভিযোগ তদন্তের জন্য বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দিঘলিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. জাকির হোসেন সরেজমিনে এসে অভিযোগকারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় লোকজন অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।

গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রশিক্ষক কাজী মঈনুল ইসলাম বাবলুকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি প্রদানের অভিযোগে এনে খুলনা বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কাজী মইনুল ইসলাম বাবলু ৩০ অক্টোবর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণার্থী রাকিবুল ইসলাম জানায়, অধ্যক্ষের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমরা প্রশিক্ষণার্থীরা এখানে প্রশিক্ষণের জন্য আসি। সেই প্রশিক্ষণের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ না করে যখন শুনি প্রতিনিয়ত ভিতরের এবং বাইরের গেস্টদের নিয়ে ভূরিভোজ করে। অথচ আমাদের প্রশিক্ষণের জন্য কাঁচামালসহ অন্যন্যা সরঞ্জাম আমাদের টাকা দিয়ে কিনে আমাদের প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে।

ইসমাইল ও নাজমুল নামে আরও দুই প্রশিক্ষার্থীও একই অভিযোগ করে বলেন আমি ওয়েল্ডিং ট্রেডের একজন প্রশিক্ষণার্থী। কিন্তু আমি প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য ডিস্কসহ অনেক কিছুই আমাদের নিজেদের টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এখান থেকে কিছু দেয় না।

প্রশিক্ষক হযরত আলী ও ইনস্পেক্টর মাহবুবুর রহমান বলেন, এই অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় মন যা চায় তাই করছে। কর্মচারীদের মারধর করে মেরে ফেলার হুমকিসহ নানান অনিয়মের সাথে জড়িত তিনি।

উপরোক্ত অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য প্রতিষ্ঠানদের অধ্যক্ষ কাজী বরকতুল ইসলাম বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে যারা অনিয়ম করে খাচ্ছিল তারাই এখন আমার ভুল ধরতেছে। তাদের অনিয়ম রুখতে আমি তাদের শত্রু হয়েছি। আমি বিধি মোতাবেক সরকারি দায়িত্ব নিয়ে ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। কে শত্রু হলো, কে আমার বিরুদ্ধে বলল এ বিষয়ে কিছুই যায় আসে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

তারেক রহমানকে নিয়ে ‘সংকট সংগ্রামে সাফল্য’ শীর্ষক তথ্যচিত্র মুক্তি পাচ্ছে বৃহস্পতিবার

তারেক রহমানের জন্মদিনে ছাত্রদলের দোয়া ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণের নির্দেশ

নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন : প্রধান উপদেষ্টা

‘ওসি সায়েদ ও এএসআই বিশ্বজিৎ ছয়টি মরদেহ পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেন’

স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট আনতে গ্রামীণফোন ও বিএসসিএলের চুক্তি

গ্রামীণ ব্যাংকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ

বিপিএল: বিশ্বকাপজয়ী মারকুটে ব্যাটারকে দলে ভেড়ানোর ইঙ্গিত ঢাকার

সাংবাদিক সোহেলকে তথ্য যাচাইয়ের জন্য আনা হয়েছিল : ডিএমপি

শরীয়তপুরের উন্নয়নে কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করব : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

যুবদল নেতা হত্যা : শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘পাতা সোহেল’সহ গ্রেপ্তার ২

১০

ফেসবুক মার্কেটপ্লেসে বড় পরিবর্তন

১১

লটারির মাধ্যমে ডিসি-এসপি বদলির দাবি গোলাম পরওয়ারের

১২

গুগলের জেমিনি লাইভে এসেছে নতুন ৫ সুবিধা

১৩

প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র

১৪

কাভার্ডভ্যানে ধাক্কা দিয়ে নিজ ট্রাকেই প্রাণ গেল চালকের

১৫

ইসির আচরণবিধি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন শিশির মনির

১৬

বাংলাদেশ ফুটবল দলকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

১৭

জকসু নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শিক্ষার্থীরা বুলিংয়ের শিকার : চন্দন কুমার

১৮

নায়কদের দিন শেষ? ২০০ কোটি পারিশ্রমিক নিয়ে শীর্ষে রাজামৌলি

১৯

একজন উপদেষ্টার ইশারায় আমাকে আটক করা হয়েছিল : সাংবাদিক সোহেল

২০
X