আইনবহির্ভূতভাবে সাড়ে ছয় কোটি টাকার ‘ডাবল টেক্স’ চেয়ে ব্যর্থ হওয়ায় চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডায়হান এক্সিমকে চার কোটি টাকার বেআইনি অর্থদণ্ড প্রদান করার অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ বেলাল। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি। চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপ এবং বাংলাদেশ পেপার ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করে মোহাম্মদ বেলাল বলেন, ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আমদানিকৃত পণ্য খালাসের সময় অগ্রিম ট্রেড ভ্যাটসহ সব ধরনের শুল্ক কর ও ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশের বেশি হারে অগ্রিম কর প্রদান করেছে আমার প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ এই খাতে আর কোনো সরকারি পাওনা নেই। তবে আমার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তাগণ মূল্য ঘোষণা দাখিলকালে ২৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ মূল্য সংযোজন না দেখিয়ে অজ্ঞতার কারণে ভুলবশত ৩৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ মূল্য সংযোজন দেখায়। তখন আমি ঢাকায় ছিলাম। পরে তা আমার চোখে পড়ায় বিষয়টি তাদের জানানো হয়। এ ছাড়া শুনানিকালে ভ্যাট কমিশনারের কাছেও বিষয়টি তুলে ধরি। যদি প্রকৃতপক্ষে ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ মূল্য সংযোজনই করা হতো তাহলে অবশ্যই মূসক আইনের ৯ ধারামতে কর রেয়াত গ্রহণ করা হতো।
তিনি বলেন, মূসক দাবিনামা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ৫৫ ধারা অনুযায়ী ঘোষিত সময়কাল বিবেচনায় না নিয়ে অযৌক্তিক ও বেআইনিভাবে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট দপ্তর ২০১৭ সালের ১৮ জুন আমাদের এক কোটি ৩৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮১৮ টাকা আদায়যোগ্য দাবিনামা পত্র পাঠায়। সেই দাবিনামার প্রেক্ষিতে তার পরের মাস ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই আমরা জবাব প্রদান করি। পরে সেই দাবিনামা সম্বলিত নোটিশের বিপরীতে একটি কমিটি গঠন করেন ডেপুটি কমিশনার শাহাদাত জামিল। গত চার বছরেও ওই কমিটি কোনো রিপোর্ট প্রদান করেনি। কিন্তু হঠাৎ গত বছর ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আব্দুল হেলিম ভূঁইয়া পুনরায় এক কোটি ৩৮ লাখ ৬৬ হাজার ৮১৮ টাকা মূসক পরিশোধের চিঠি প্রদান করেন। কিন্তু কোনো ধরনের কারণ দর্শানো নোটিশ না দিয়ে গত ৭ সেপ্টেম্বর আগের দাবিকৃত কর বেআইনিভাবে বহুগুণ বৃদ্ধি করে ছয় কোটি ৪৯ লাখ ৪৯ হাজার ৭২৮ দশমিক ৬১ টাকা এবং চার কোটি টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন।
এই অর্থদণ্ড ও বৃদ্ধিকৃত কর সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, আইনানুগ সাংঘর্ষিক ও বিধিবদ্ধ আইন পরিপন্থি বলে দাবি তার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যেহেতু মূসক আইনের ৯ ধারা মোতাবেক রেয়াত গ্রহণ করা হয়নি, ফলে এই অর্থদণ্ডের আদেশ কমিশনার, কাস্টমসের এখতিয়ারবহির্ভূত। যা ৩৭ ধারার সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। একটি করদাবি আদেশের পর দ্বিতীয়বার একই কর দাবি করা বেআইনি ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডাবল টেক্স দাবি।
এ সময় চট্টগ্রাম কাগজ ও সেলোফিন ব্যবসায়ী গ্রুপ এবং বাংলাদেশ পেপার ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সচিব কুতুব উদ্দিন, প্রেস সচিব সাইফুল আলম, সংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুল আলম, অর্থ সম্পাদক মো. রফিক উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন