পেয়াঁজের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে দিগুণ হওয়ায় শেরপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে অপরিপক্ব কাঁচা পেয়াঁজ বিক্রি লক্ষ্য করা গেছে। দ্বিগুণ দাম হওয়ায় অনেক কৃষক সময়ের চেয়ে আগে মাঠের পেয়াঁজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। এতে কৃষক ভালো মূল্যে পেলেও উৎপাদন কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হঠাৎ পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় ক্রেতাদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ পড়েছে। কিন্তু একই সময় বিক্রেতা এবং কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। সদর উপজেলার কামারেরচর ইউনিয়নের কৃষক হাসেন আলী বলেন, প্রতি বছর পেঁয়াজ-রসুনে লোকসান হয়। এবার বাজারে বেশি দাম হওয়ায় আমরা পেঁয়াজ উঠাতে শুরু করেছি। কারণ, পরে যদি দাম কমে যায়। উৎপাদন কিছুটা কম হলেও ডবল দামে বিক্রি করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না।
কৃষক ছমির আলী বলেন, এত ভালো দাম সব সময় থাকবে না। তাই এবার লাভের আশায় আগেই বিক্রি করছি। গতবারও লস হয়েছে। দাম সব সময় এমন থাকবে এর নিশ্চয়তা তো নেই। যে কারণে বাজারে বেশি দাম থাকায় অতিরিক্ত লাভের আশায় আমরা কমপক্ষে ১৫ দিন আগেই পেঁয়াজ উঠাতে শুরু করেছি। আশা করি, এবার পেঁয়াজে আমরা কিছুটা লাভবান হব। তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজ ভালো করে পাকলে বিঘা প্রতি ৭০-৮০ মণ হবে। এখন উঠালে বিঘা প্রতি ৫০-৬০ মণ হবে। তবে এই দাম তখন আমরা পাব না। বাধ্য হয়ে বেশি লাভের আশায় আমরা অগ্রিম পেঁয়াজ উঠিয়ে বাজারে বিক্রি করছি। আশা করি, এবার কিছুটা লাভের মুখ দেখব।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক আবু হাসান বলেন, বাজারে পেঁয়াজের মূল্যে আকাশ ছোয়া। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। খোলা বাজারের বিক্রেতারা বাধ্য হচ্ছে দাম বাড়াতে। আর আমরা অসহায় ক্রেতা বাধ্য হয়ে কিনছি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশি দামের আশায় পেঁয়াজ উঠাতে শুরু করছেন অনেক কৃষক। এতে কিন্তু আমাদের উৎপাদন কম হচ্ছে। সামগ্রিক ভাবে কিন্তু এটা দেশের মোট উৎপাদনে বাধা তৈরি করছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বলেন, আগে পেয়াঁজ তুললেও সমস্যা নেই। সব সময় তো ব্যবসায়ীরাই লাভ করে। এবার আগাম পেঁয়াজ বিক্রি করায় কিছুটা হলেও সরাসরি কৃষক লাভবান হবেন। এটা ভেবেই আমার মনে শান্তি লাগছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার শেরপুরে ৯৯৮ হেক্টর জমিতে এক হাজার টন পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬৬ হেক্টর জমির পেয়াঁজ দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে বাজারে আসবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিঘা প্রতি কৃষকের লাভ থাকবে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি কৃষকের খরচ হয় হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, অসময়ে অপরিপক্ব পেঁয়াজ উঠালে উৎপাদন কিছুটা কমে গেলেও কৃষক সরাসরি বেশি দাম পাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এটা কোথাও প্রভাব পরবে না। কারণ, কৃষক পাতাসহ পেয়াঁজ বিক্রি করায় ওজনে সাশ্রয়ী হচ্ছে। আবার এই জমিতে পেঁয়াজ উঠিয়ে অন্য আবাদ করবে। শুধু পেঁয়াজ নয়, যেকোনো ফসলে বেশি দাম পেলে কৃষক উৎসাহ পায়।
মন্তব্য করুন