মৌলভীবাজার পৌর শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে এখন ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রির ধুম পড়েছে। শীতের সময় এখানকার নিম্ন আয়ের অনেক মানুষের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ভাপা ও চিতই পিঠার ব্যবসা। সদ্য চুলা থেকে নামানো গরম আর সুগন্ধি ধোঁয়ার সুগন্ধে মন ভরে ওঠে সবার। এসব পিঠার স্বাদে ক্রেতারা মুগ্ধ। একদিকে ভাপা ও চিতই পিঠার স্বাদ আর অন্যদিকে চুলার আগুন আর জলীয় বাষ্পের উত্তাপ যেন চাঙ্গা করে দেয় দেহমন। এ যেন শীতের আরেক আমেজ।
গত দুই সপ্তাহ যাবত এ কুয়াশার মধ্য দিয়ে শীতের শুরু হয়েছে। শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চলছে পিঠা বিক্রির ধুম। সন্ধ্যায় নানা বয়সী মানুষ পিঠা খেতে আসছেন এসব পিঠার দোকানে। ফুটপাতের দোকান, রাস্তার পাশে, অলিতে-গলিতে ও মোড়ে-মোড়ে জমে উঠেছে এসব শীতের পিঠার দোকান। সারাবছর কমবেশি পিঠা বিক্রি হলেও শীত এলে বেড়ে যায় ক্রেতাদের আনাগোনা। শীতের এ মৌসুমে মুখে জল আনা পিঠা-পুলির দোকানে ভিড় করছে শিশু-কিশোর, বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ। তারা পিঠা খেতে খেতে মজার গল্পে মেতে ওঠেন।
সন্ধ্যায় সদর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র কুসুমবাগ, পশ্চিমবাজার, চৌমুহনী, চাঁদনীঘাটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্বল্প আয়ের লোকজন গড়ে তুলেছেন অস্থায়ী পিঠার দোকান। মূলত সেখানে ভাপা ও চিতই পিঠা তৈরি হচ্ছে। রিকশাচালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এ পিঠার দোকানের ক্রেতা। অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দের পিঠা বাসাবাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।
পৌরসভার বড়কাপন এলাকার বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, সারাদিন পরিশ্রমের পর বাড়িতে গিন্নীর আর পিঠা বানাতে ইচ্ছে করে না। তাই মাঝে মধ্যে পরিবারের জন্য ফুটপাত থেকে পিঠা কিনে বাড়িতে নিয়ে যাই।
পিঠা বিক্রেতা সত্তার মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই পিঠা ব্যবসার সাথে আমি জড়িত। শীতকাল আসলেই পিঠা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকি। প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি করে চালের গুঁড়া লাগে। ভাপা ও চিতই পিঠা পিস প্রতি ১০ টাকা দরে বিক্রি করি। তবে ভাপা পিঠার চাহিদা একটু বেশি। খরচ বাদে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। পিঠা আমাদের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য। বর্তমান সময়ে এই ঐতিহ্যগুলো ক্রমেই হাঁরিয়ে যাচ্ছে। শীতকালে বাসা বাড়িতে মেহমান আসলে আনন্দ উল্লাস করে বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করে মজা করে সবাই মিলে খাওয়া হতো। এখন আর বাসাবাড়িতে এসব আয়োজন চোখে পড়ে না। নানান ব্যস্ততার কারণে এখন বাজার থেকে কিনে এনে খেয়ে নেন পিঠাপ্রেমীরা। গ্রাম বাংলার পিঠার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমাদের সকল পরিবারে পিঠা তৈরি করার নীতি চালু রাখা প্রয়োজন, তা না হলে একদিন এই ঐতিহ্য বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
মন্তব্য করুন