মিরিঞ্জা ভ্যালিতে আকাশ-মেঘ ভ্রমণপিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এই মিরিঞ্জা ভ্যালি। এখানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো পাহাড় আর মেঘের খেলা উপভোগ করা। অবারিত সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়। এখানে মেঘের সঙ্গে পাহাড়ের যেন আজন্ম বন্ধুত্ব। প্রকৃতি এলাকাটিকে সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। এখানে ইচ্ছে করলেই ছোঁয়া যায় মেঘ, আকাশকেও মনে হয় বেশ কাছে। রাতে শহরের আলোতে যেন সৌন্দর্য আরও বৈচিত্র্যময়।
বাংলাদেশের ভূ-স্বর্গ পার্বত্য জেলায় মেঘ-পাহাড়ের খেলা দেখার পাশাপাশি প্রকৃতিকে সঙ্গে পর্যটকদের অনাবিল আনন্দ দিতে চিরসবুজ সাজে সেজেছে বান্দরবানের লামার মিরিঞ্জা ভ্যালি। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া হতে আলীকদম সড়কে ২৭ কিলোমিটার দূরে লামা উপজেলায় অবস্থিত এই মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটন কেন্দ্র। নির্মল আনন্দের রাজ্যে নগরের যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির বুকচিরে আকাশ ছোঁয়া চিরসবুজ শান্তিধাম।
এখানে প্রতিদিন দেখা যায় পাহাড় ও মেঘের মিতালি। পর্যটকদের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে এ পর্যটনকেন্দ্র। সেখানে গেলে যে কারো মনে প্রকৃতিপ্রেম জাগবেই। এ ছাড়া পাহাড়ি পল্লি ঘরের আদলে তৈরি মাচান ঘর। বাতাস ও বাঁশের বেড়ায় ছিদ্র থেকে তাকালে দেখা মেলে রাতের অন্ধকারে আকাশের হাজার তারার মেলা।
মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্রটি ২ একর পাহাড়জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে। লামা শহর থেকে আঁকাবাঁকা সড়ক বেয়ে যেতে হয় এই কেন্দ্রটিতে। লামা শহর থেকে মিরিঞ্জা ভ্যালির দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। পাহাড়ে উঁচুতে পরিবেশবান্ধব ইকো রিসোর্ট হিসেবে তৈরি করা হয়েছে বাঁশের ২টি মাচান ঘর। এ ছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্তে রাখা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে কয়েকটি তাঁবু ঘর। এদের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে রাতে চিকেন ফ্রাই, বিরায়ানিসহ নানা পদের খাবার। কেন্দ্রটি চারপাশে নিরাপত্তা রয়েছে বেশ মোটামুটি। ২০২১ সালে গড়ে তোলা পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়েছে ২০২২ সালে। তাছাড়া এই মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্রটি গড়ে ওঠার ফলে কর্মসংস্থান হয়েছে ছয়জনের, ভবিষ্যতে আরও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আশ্বাস পর্যটন সংশ্লিষ্টদের।
কথা হয় মিরিঞ্জা ভ্যালিতে নোয়াখালী, ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক দলের সঙ্গে। তারা জানিয়েছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ভ্যালিটি অনেক উপরে। চারদিকে উঁচু উঁচু পাহাড় আর সবুজে ঘেরা। এই ভ্যালিতে না আসলে জানতেন না প্রকৃতি এত সুন্দর। তাছাড়া ভোর হলে মেঘের কুয়াশার চাদরে ঢেকে রেখেছে পাহাড়কে। এমন সৌন্দর্যের স্থানে আসলে যে কারো মনে প্রকৃতিপ্রেম জাগবেই।
শীতের এ মৌসুমেও এখানে গাছে গাছে নতুন পত্র-পল্লব, প্রকৃতি নতুন উদ্যমে সেজেছে। বেড়ানোর প্রবল ইচ্ছা মনের ভেতর ঘুরেফিরে। পর্যটনকেন্দ্রটির কাছেই উপজেলা সদরে আরও থাকছে, মুরং, মার্মা, ত্রিপুরাসহ ১১ ভাষার সম্প্রদায় উপজাতির সংস্কৃতি ও লোকাচারের সান্নিধ্য। থাকছে সুখী ও দুঃখী নামের দুটি ১ হাজার ফুট উঁচু ২টি পাহাড়ের বুকচিরে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা মাতামুহুরী নদী।
মিরিঞ্জা ভ্যালির নকশাকার ডেনরিয়াল ম্রো জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে এই পাহাড়ের বিভিন্ন ফলজ ও বাগান ছিল। তখন থেকে পর্যটকদের যাওয়া আসা ছিল অনেক। ভোর হলে বাগানে গেলে দেখা যেত মেঘের খেলা। সেখান থেকে পরিকল্পনা করে তৈরি করা হয় পর্যটনকেন্দ্র। নামকরণ করা হয় মিরিঞ্জা ভ্যালি নামে। সম্পূর্ণ প্রকৃতিবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এই পর্যটনকেন্দ্রটি। আগামীতে মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটকদের কাছে অন্যরকম হয়ে উঠবে বলে আশা।
কথা হয় মিরিঞ্জা ভ্যালি পর্যটনকেন্দ্র ব্যবস্থাপক জিয়া রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, ২০২১ সালে পাহাড়টিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে স্বপ্ন দেখেছিলেন। ২০২২ সালে এসে সেটি বাস্তবায়ন করেন। বর্তমানে তার মিরিঞ্জা ভ্যালিতে প্রতিদিন পর্যটকরা বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন। আবার অনেকেই মুঠোফোনে বুকিং দিচ্ছেন। মাসে তার আয় হয় কয়েক লাখ টাকা। তার এই পাহাড়ে পর্যটকদের জন্য রেখেছেন বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। তিনি বলেন, আগামীতে এই পর্যটন কেন্দ্রে ওয়াচ টাওয়ার তৈরি করা হবে। যাতে পর্যটকরা আরও বিমোহিত হয়।
মন্তব্য করুন