পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সড়ক সংস্কারে অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহের জেরে সাংবাদিককে মারধরের হুমকি দিয়েছে কৃষক লীগের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম এমু।
সোমবার (৫ জুন) রাত ৮টার দিকে দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এক চায়ের দোকানে ১৫-২০ জনের গ্রুপ নিয়ে ওই সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় রাত ২টার দিকে দেবীগঞ্জ থানায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন সাংবাদিক নাজমুস সাকিব মুন। তিনি সময়ের কণ্ঠস্বর ও সকালের সময়ের স্থানীয় সংবাদ প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।জানা যায়, পৌর সদরের পোস্ট অফিস মোড় থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যন্ত ১৫ লাখ ১২ হাজার ৯৯৭ টাকা বরাদ্দে ৪৬১ মিটার রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়। সোমবার (৫ জুন) বিকেলে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে সেখানে সংবাদ সংগ্রহে যান নাজমুস সাকিব মুন। এ সময় প্রাক্কলন অনুযায়ী রাস্তার প্রস্থ ৩.৭০ মিটার থাকার কথা থাকলেও সেখানে রাস্তার প্রস্থ ৩ মিটার পাওয়া যায়। ৩ ইঞ্চি আকারের খোয়া (ইটের টুকরো) ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও ৫-৭ ইঞ্চি আকারের খোয়া ব্যবহার করতে দেখা যায়। একই সঙ্গে ব্ল্যাকটপ অপসারণ করে ঠিকাদাররা সেগুলো রিসাইকেল করে পুনরায় ব্যবহারের পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তবে প্রাক্কলনে এই ব্লাকটপ ব্যবহারের কোনো নিয়ম নেই।
এ বিষয়ে সাব-ঠিকাদার দেলোয়ার হোসেন দেলুকে ফোন করলে তিনি জানান, ‘যতটুকু কাজ করব, ততটুকু বিল পাব। ভালো হলো বিষয়টি জেনে। নয়তো বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দ হওয়ায় পরে অডিট এলে পুনরায় কাজ করতে হতো। এ সময় ব্ল্যাকটপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, ব্ল্যাকটপ গিলে খেয়েছি। আপনি পৌর প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেন।’ এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এর কিছুক্ষণ পর তার ব্যবসায়িক পার্টনার সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগে সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম এমু ফোন করে বলেন, ‘আমরা প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করছি। আপনার কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের ফোন না দিয়ে ডিসি, ইউএনও, নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানান। আমাদের কোনো কাজে ভবিষ্যতে কখনও কল করবেন না।’
এর কিছুক্ষণ পর তিনি দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকানে ১৫-২০ জনকে নিয়ে আসেন। সেই সময় সাংবাদিক নাজমুস সাকিব মুন তার সংগঠনের ও স্থানীয় অন্য সংবাদকর্মীদের সঙ্গে চা পান করছিলেন।
এ সময় আশরাফুল আলম এমু হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোকে থাপড়াব আমি। আগের এমু থাকলে এসে আগে পিটাতাম, তারপর কথা বলতাম। তোকে মারার জন্য আমাকে লাগবে না। আমার যেসব টোকাই ছেলেপেলে আছে, তাদের বললেই তোর কলার ধরবে। আমার রাজনীতি, আবুর (মেয়র) রাজনীতি আলাদা। সম্পর্ক যদি নষ্ট করতে চাইস, তাহলে সমস্যা নাই। আমিও চোখের পর্দা উল্টায় দিব।’
এ ঘটনায় পঞ্চগড় জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আনিস প্রধান বলেন, ‘সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহ করে সংবাদ প্রকাশ করবে, এটাই তার কাজ। কিন্তু এভাবে হুমকি-ধমকি স্বাধীন সাংবাদিকতায় বাধার শামিল। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে দোষীদের আইনানুগ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি। নয়তো সামনে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হবে।’
দেবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এসপি) মোছা. রুনা লয়লা বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। অভিযোগের সত্যতা থাকলে আমাদের পক্ষ থেকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন