চায়ের রাজধানী খ্যাত সিলেটের মৌলভীবাজার জেলা বাংলাদেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। আপনি চাপ্রেমী হন বা না হন, চায়ের রাজ্যে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটাতে ঘুরে আসতে পারেন এ জেলা। এখানে রয়েছে চমৎকার কিছু রিসোর্ট। শীতের দিনগুলোতে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে এই রিসোর্টগুলো হতে পারে আপনার গন্তব্য। জেনে নেই রিসোর্টগুলোর কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য।
১. গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ
সিলেটের প্রথম পাঁচ তারকা মানের হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ গড়ে উঠেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। ঢাকা থেকে মাত্র চার ঘণ্টা দূরত্বে অবস্থিত বিলাসবহুল ও ব্যয়বহুল এ রিসোর্টটি গত কয়েক বছরে পর্যটকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। মুভি থিয়েটার, সুইমিং পুল, প্লে গ্রাউন্ডসহ এখানে রয়েছে তিনটি রেস্টুরেন্ট ও দুইটি ক্যাফে। এখানে রয়েছে আট ধরনের মোট ১৩৫টি রুম এবং স্যুট। রুমের ধরন অনুযায়ী দুজনের জন্য এক রাতের ভাড়া ৩১ হাজার ১০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৪৪ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ছাড়া চার জনের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটের ভাড়া এক রাতের জন্য ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
২. দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা
দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা মৌলভীবাজার টু শ্রীমঙ্গল সড়কের গিয়াসনগরে অবস্থিত অন্যতম বিলাসবহুল একটি রিসোর্ট। বিশাল জায়গা জুড়ে নির্মিত এ রিসোর্টে সুইমিং পুল, স্পা, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, মুভি থিয়েটার, সাইকেল রাইডিং ও জিমসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। চারপাশে গাছগাছালি ও ১ হাজার ফুট লম্বা একটি সুবিশাল লেক রয়েছে। এখানে থাকার জন্য হোটেল রুম ও ভিলা দুই ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। হোটেলে এক রাতের ভাড়া ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১৮ হাজার টাকা। সাত ধরনের ভিলার ভাড়া ২১ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। এরসঙ্গে ৯ শতাংশ সার্ভিস চার্জ ও ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য।
৩. লেমন গার্ডেন রিসোর্ট
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে লাউয়াছড়ায় অবস্থিত এই রিসোর্টটি পরিবার-পরিজন নিয়ে নিভৃতে ঘুরে আসার জন্য আদর্শ। চারপাশে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা এ রিসোর্টে রয়েছে ২৫টি কক্ষ। দুজনের কক্ষগুলোর ভাড়া ৩ হাজার ৬০০ টাকা থেকে শুরু, ফ্যামিলি রুমের ভাড়া ৭ হাজার ২০০ টাকা। দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশমূল্য ৩০০ টাকা, সঙ্গে থাকবে কমপ্লিমেন্টারি হালকা নাশতা। এ ছাড়াও রিসোর্টটিতে রয়েছে সুইমিং পুল ও স্পা, শিশুদের প্লেগ্রাউন্ড, কনফারেন্স হলের সুবিধা। রিসোর্টটিতে কন্টিনেন্টাল, ভারতীয়, চাইনিজ এবং দেশি- এ চার রকমের মেন্যুর খাবার পরিবেশনের সুব্যবস্থা রয়েছে। রিসোর্টটির অদূরে লাউয়াছড়া ইকো পার্ক অবস্থিত। ফলে দর্শনার্থীদের জন্য সুলভ মূল্যে থাকার জায়গা হিসাবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এ রিসোর্টটি।
৪. নভেম ইকো রিসোর্ট
শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে অবস্থিত নভেম ইকো রিসোর্ট চা বাগানের সবুজে ঘেরা অনন্য সুন্দর এক রিসোর্ট। রিসোর্টটির চারপাশ ঘিরে রয়েছে ছোট ছোট টিলা ও চা বাগান। এখান রয়েছে স্পোর্টস রুম, সুইমিং পুল, ব্যাডমিন্টন কোর্ট ইত্যাদি। এখানে একটি দৃষ্টিনন্দন কাঠের ব্রিজ রয়েছে। এ ছাড়া রিসোর্টের সবকিছুতেই রয়েছে প্রকৃতির ছোঁয়া। রুমভেদে ৭ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকার বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে নভেম ইকো রিসোর্টে।
৫. বালিশিরা ইকো রিসোর্ট
ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ৯২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত রিসোর্টটির বিশেষত্ব হিসাবে আপনি পাবেন নিজস্ব এয়ারপোর্ট শাটল সার্ভিস এবং প্রাইভেট সুইমিং পুলের ব্যবস্থা। তিন তারকাবিশিষ্ট ইকো রিসোর্টটিতে রয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম, যেমন ফ্যামিলি রুম উইথ ব্যালকনি, ডিলাক্স ডাবল রুম, প্রাইভেট পুল ভিলা ইত্যাদি। অনেকগুলো রুম থেকে সামনে পাহাড়ের সবুজ দেখা যায়। সকালের কমপ্লিমেন্টারি নাশতায় রয়েছে কন্টিনেন্টাল, ভেজিটেরিয়ান মেন্যু, দুপুর এবং রাতের খাবারে দেশি খাবারের পাশাপাশি চাইনিজ মেন্যুর ব্যবস্থা থাকে। রাতে বারবিকিউয়ের সুবিধাও রয়েছে। রিসোর্টটিতে মৌসুমভেদে বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ এবং ডিস্কাউন্ট অফার থাকে। রুমের ব্যালকনিতে বসে অদূরে পাহাড়ের গায়ে ঝি ঝির ডাক এবং ছোট ঝরনার পানি বয়ে চলার মৃদু শব্দ শুনতে মন্দ লাগবে না। বালিশিরা রিসোর্টের কক্ষভেদে ভাড়া ১১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ১৩ হাজার ৯০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
৬. টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ
গ্রামীণ প্রকৃতির আবহে তৈরি রিসোর্টের সবকিছুতেই পাওয়া যাবে মাটির ছোঁয়া। রিসোর্টে রয়েছে পাঁচটি মাটির ঘর, চারটি অত্যাধুনিক এসি ভিলা এবং একটি প্রাইভেট পুল ভিলা। এ ছাড়া আছে একটি কমন সুইমিংপুল এবং একটি লেক ভিউ ওপেন রেস্টুরেন্ট। এখানে মাড হাউজের এক রাতের ভাড়া ৫ হাজার ৫০০ টাকা, এসি ভিলা ৭ হাজার টাকা এবং প্রাইভেট পুল ভিলা ১১ হাজার টাকা। গ্রামীণ আবহে সময় কাটাতে চাইলে টিলাগাঁও হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।
৭. ওয়াটারলিলি রিসোর্ট
শ্রীমঙ্গল উপজেলার হবিগঞ্জ রোডের উত্তরসুর এলাকায় রিসোর্টটির অবস্থান। রিসোর্টটিতে তিনটি কাঠের বাড়ি এবং দুইটি একটি দুইতালা দৃষ্টিনন্দন কটেজ রয়েছে। কটেজের রুম ভাড়া ৩ হাজার টাকা থেকে বিভিন্ন প্রকারভেদে ১২ হাজার পর্যন্ত। রয়েছে দেশি খাবার ও সুইমিং পুল এর সুব্যবস্থা। চাইলে নির্ধারিত মেন্যুর বাইরে নিজের পছন্দমতো খাবারও খেতে পারবেন। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে সিএনজি করে হবিগঞ্জ রোডের উত্তরসুর এলাকায় আসলে দেখা মিলবে ওয়াটারলিলি রিসোর্টের সাইবোর্ড। পাওয়ার গ্রিড স্টেশনের পথে কয়েক মিনিট হাটলেই চোখে পড়বে সুদৃশ্য রিসোর্টটি।
৮. টি হেভেন রিসোর্ট
শ্রীমঙ্গলের অপরূপ সবুজ প্রকৃতি, চা-বাগান আর হাইল হাওড়ের শান্ত জলরাশি রিসোর্ট থেকে উপভোগ করা যায়। রিসোর্টে হামহাম, ছায়াবৃক্ষ এবং ক্যামেলিয়া নামের তিনটি এক্সিকিউটিভ রুম ছাড়াও ফ্যামিলি ডিলাক্স রুম, টুইন শেয়ার রুম এবং কাপল ডিলাক্স রুমের ব্যবস্থা রয়েছে। রুমগুলোর ভাড়া ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।
রিসোর্টটিতে রয়েছে সুদৃশ্য কনফারেন্স রুম, দেশি খাবারের রেস্তোরাঁ, সুইমিং পুল এবং শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য দেখার জন্য রেন্ট এ কারের সুব্যবস্থা। হবিগঞ্জ রোড ধরে শ্রীমঙ্গল শহরে প্রবেশের পথেই চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন রিসোর্টটি।
৯. অরণ্যনিবাস ইকো রিসোর্ট
বাঁশ ও ছনের তৈরি ইকো রিসোর্টটি সহজেই চোখ জুড়াবে দর্শনার্থীদের। রিসোর্টে রয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য ছাড়াও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যে তৈরি ৮টি কটেজ। রিসোর্টে রয়েছে ৮টি কক্ষ। এ ছাড়াও রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ৬টি পট হাউসের ব্যবস্থা। কটেজের রুম বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটা রুমে রয়েছে এসি। শুক্র ও শনিবার কটেজের বড় রুমগুলোর ভাড়া সাড়ে ৫ হাজার টাকা এবং অন্যান্য দিনের জন্য রয়েছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বনগাঁও গ্রামে রিসোর্টের অবস্থান।
১০. শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম
শ্রীমঙ্গলের নয়নাভিরাম টিলা এবং চা-বাগানে ঘেরা ২৫ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গল টি রিসোর্ট অ্যান্ড মিউজিয়াম। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের পাশে ভাড়াউড়া চা-বাগানের কাছে রিসোর্টটির অবস্থান। মূলত পুরোনো একটি ব্রিটিশ বাংলোকে এই রিসোর্টে রূপান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় বাণিজ্যিকভাবে রিসোর্টটি পরিচালনা করা হয়ে থাকে। রিসোর্টের টি মিউজিয়াম, টেনিস কোর্ট, ব্যাডমিন্টন কোর্ট, স্যুভেনির শপ, ক্যাফের সাজসজ্জায় রয়েছে এক অভিজাত ছোঁয়া। ছবির মতো সুন্দর রিসোর্টটির ইকনোমি রুমের ভাড়া শুরু হয় ২ হাজার টাকা থেকে এবং এসি বাংলোর কক্ষের ভাড়া ন্যূনতম ৮ হাজার টাকা (সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য)।
মন্তব্য করুন