শরীয়তপুরের জাজিরায় জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নাজমা বেগম (৪০) নামের এক বিধবাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে। অভুযক্তরা হলো- জাজিরা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নুরু মাদবরের ছেলে লুৎফর মাদবর, আক্তার মাদবর, এবং আউয়াল মাদবর।
রোববার (৩১ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় জাজিরা পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের আহাদ্দি মাদবর কান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থল থেকে আহত নাজমা বেগমকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। পরে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠান। বর্তমানে গুরুতর অবস্থায় তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. তানভীর আহমেদ কালবেলাকে জানান, সকাল ৮টার দিকে নাজমা বেগমের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কোপের আঘাত নিয়ে স্বজনরা হাসপাতালে আসে। আমি নাজমা বেগমকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করি। তবে, তার অবস্থা গুরুতর থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করি।
ভুক্তভোগী নাজমা বেগমের মেয়ে সাইফা কালবেলাকে জানান, আমার বাবা মারা যাওয়ার আগে তার সকল জমিজমা মায়ের নামে লিখে দিয়ে যান। স্বামী হারা মা সেই সকল জমিতে চাষাবাদ করে আমাদের সংসার লেখাপড়া থেকে শুরু করে সকল কিছুর খরচ যোগান দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সকালে ক্ষেতে ফসল বুনতে গেলে আমার মাকে মারাত্মকভাবে কুপিয়ে জখম করে জমিতে ফেলে যায় লুৎফর মাদবর, আক্তার মাদবর,এবং আউয়াল মাদবর। বাবা হারা মেয়ে হিসেবে এর কঠিন বিচার চাই।
প্রত্যক্ষদর্শী রাশিদা বেগম বলেন, আমি সকাল বেলা চিল্লাচিল্লির শব্দ শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখি নাজমা বেগমকে লুৎফর মাদবর এবং তার ভাইয়েরা নির্মমভাবে মারছে। এ সময় তাকে রামদা, কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে এলাকার লোকজনসহ তার পরিবারের সদস্যরা তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যায়।
অভিযুক্ত লুৎফর মাদবরের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমার কেনা উক্ত জমিটিতে আমি দুইবার সরিষা বুনেছিলাম। জমিটা নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছিল। যেখানে আমার পক্ষে রায়ও ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু রাতের আঁধারে ওরা আমার জমিতে হাল দিতে গেলে আমি তাদের বাধা দিতে যাই। এ সময় আমাদের মধ্যে ঝগড়া হওয়ার একপর্যায়ে মারামারি হয় এবং ধারাল ছেনদা দিয়ে আমার পায়ে কোপ দিয়ে জখম করায় আমিও চিকিৎসা নিয়েছি।
৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াস মাদবর কালবেলাকে বলেন, মজিবর মাদবর মারা যাওয়ার পরে জমিজমা নিয়ে তাদের মাঝে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছিল। তাই বলে এই বিধবা মহিলাকে এভাবে কুপিয়ে জখম করা অমানবিক। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের কঠিন বিচার হওয়া উচিত।
জাজিরা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সুজন হক জানান, ঘটনা তদন্তে এবং আলামত সংগ্রহের জন্য ঘটনাস্থলে (এসআই) দেলোয়ারকে পাঠিয়েছি। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন নুরু মাদবরের ছেলে লুৎফর মাদবর ও তার ৩ ভাই নাজমা বেগমকে কুপিয়ে জখম করেছে। জমিতে পতিত অবস্থায় থাকা হালচাষের জন্য ব্যাবহৃত লাঙ্গলটি থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
জাজিরা থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান জানান, আমরা ঘটনা তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ পাঠিয়েছি। পাশাপাশি খবর পাওয়া মাত্রই আমরা আগে ভিক্টিমকে চিকিৎসা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে মামলা নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন