ভোটের রাত থেকে আতঙ্ক, হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে চলছে কুমিল্লার দেবিদ্বার (সংসদীয় আসন-৪) উপজেলায়। এলাকার ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় মারধরের শিকার হচ্ছে নৌকার পক্ষে কাজ করা নেতাকর্মীরা। আতঙ্কে নেতাকর্মীদের অনেকে এলাকা ছেড়েছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে।
দেবিদ্বারে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কবলে পড়ছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের পক্ষের আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। অভিযোগ উঠেছে, তার সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা-ভাঙচুর ও মারধর করছে বিপক্ষরা। ভোটের ফলাফল ঘোষণার রাত থেকেই একের পর এক সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে।
সাবেক এমপি রাজী ফখরুলের অসংখ্য নেতাকর্মীর অনেকেরই আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। সংখ্যালঘুদেরও নির্যাতন করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের কেউ থানায় অভিযোগ করলে আবারও হামলা-ভাঙচুর হবে এমন হুমকিও পাচ্ছেন অহরহ। এমন অভিযোগের দায় কোনোভাবে এড়াতে পারছেন না ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের অনুসারিরা। এমনকি ভোটের দিন ভানী ইউনিয়নের এমপি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের ওপর হামলা করেছে ঈগল সমর্থিত নেতাকর্মীরা। নৌকার পক্ষে কাজ করায় ভানী ইউনিয়নের সূর্যপুর গ্রামের বিল্লালের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে।
এ ছাড়া নৌকার পক্ষে কাজ করায় বিআরটিসি কাউন্টারে গিয়ে নৌকার সমর্থক নাঈমসহ আরো ৪/৫ জনকে মারধর করে ঈগলের সমর্থক ময়নামতি এলাকার সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে রাজু, সাগরসহ কমপক্ষে ২০এর অধিক দুর্বৃত্ত।
ভানী ইউনিয়নের প্রায় ৪ শতাধিক হিন্দু ভোটার এখন আতঙ্কে রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই নৌকার পক্ষে কাজ করায় তাদের ওপর ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। নৌকার পক্ষে কাজ করায় নির্বাচনের পরদিন সন্ধ্যায় পবন চন্দ্র দাস ও সকালে মুন্সিবাড়ির বাসিন্দা মবিন মুন্সির ছেলে খলিল মুন্সিকেও মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলামকেও হুমকি প্রর্দশন করা হয়েছে। নৌকা প্রতীকের সমর্থিত নেতাকর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন মেম্বার, আবুল বাশার, হানিফ খান, নেছার উদ্দিন ভূইয়া, শুভ ভূইয়া, জামাল ভূইয়ার নেতৃত্বে এসব হুমকি-ধমকি অব্যাহত রয়েছে।
রাজামেহের ইউনিয়নে নৌকার সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা হয়েছে। খাদঘর এলাকায় নৌকার সমর্থক সুমনের বাড়িতে দল বেঁধে ঢুকে হামলা-ভাঙচুর করেছে। মারধর করা হয়েছে নারী-পুরুষ সবাইকে। জাফরাবাদ এলাকায় খলিলের দোকানের সামনে নৌকার এক সমর্থককে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে ঈগল প্রতীকের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া জিএস আব্দুল মান্নানের ছোট ভাই নৌকার সমর্থক রুহুল আমিনকে কুপিয়ে আহত করেছে। জিএস আব্দুল মান্নানের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। রাজামেহের ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বিল্লাল ও তার ভাবিকে মারধর করে তাদের চোখ নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
গুনাইঘর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ইউসুফের মাথা ও পায়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়েছে। এ ছাড়া তার বড় ভাই, চাচা, চাচাত ভাইতে কুপিয়ে আহত করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হিন্দু পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পরও এমন ঘটনা ঘটেনি। যা এই কয়েকদিনে হইছে। আমরা খুব আতংকে আছি।
কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন সরকার জানান, ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরপরই বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা ঈগলের নেতাকর্মীদের ওপর ভর করে নৌকা ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে হামলা শুরু করেছে। মারধরসহ হুমকি প্রদর্শন করছে। এখনও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায়, এখনই যদি নৌকার পক্ষে কাজ করায় নৌকার নেতাকর্মীরা মার খেতে হয়, তাদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর করা হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাবো। এটা দু:খজনক। এভাবে মার খেতে থাকলে আ.লীগের নেতাকর্মীরা কোথায় যাবে। আমাকে দুর্বল করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আমার নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। যাতে বিএনপি-জামায়াত বিভিন্ন ধরণের নাশকতা করতে পারে, তাদের প্রতিহত করার জন্য যাতে আ.লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগের কোনো নেতাকর্মী না থাকে, সেজন্যই এখনি হামলা-মারধর করা হচ্ছে। ঈগলের প্রতীকের প্রার্থীর সাথে এক হয়ে তারা এমন নারকীয় কান্ড করছে। আমি নিজে প্রাণহানির শংকায় রয়েছি। মুখোশধারী বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আমার বাড়ির আশপাশে মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছে। আমি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়েছি।
রাজী মোহাম্মদ ফখরুল জানান, ভোটের আগেই আমাদের নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে আসছিল ঈগল সমর্থিত নেতাকর্মীরা। ভোটের রাত থেকেই আ.লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকর্মী, সংখ্যালঘু ও সাধারণ ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা হচ্ছে। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভানী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন ভূইয়ার নেতৃত্বে ভোটের দিন সূর্যপুর ভোটকেন্দ্রে আমার উপর হামলা হয়েছে। এতসব হামলার পরও প্রশাসন চুপ রয়েছে।
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নয়ন মিয়া জানান, যখনই কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে, আমরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। তদন্ত করছি। একটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল রাখতে আমরা কাজ করছি।
মন্তব্য করুন