জয়পুরহাটে আলু চাষিরা শঙ্কায় দিন পার করছেন। তীব্র ঠান্ডা, ঘন কুয়াশা এবং সূর্যের দেখা না পাওয়ায় আলু গাছে লেটব্লাইট রোগ দেখা দিয়েছে। এটি স্থানীয়ভাবে পচাকানা বা মোড়ক রোগ নামে পরিচিত।
পচাকানা রোগ নিয়ে আলু চাষিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। কীটনাশক ছিটিয়েও সে রকম সুফল পাচ্ছেন না তারা। আলু গাছের পাতা কালো হয়ে পচে মরে যাচ্ছে। আলু উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। উৎপাদন ব্যাহত হলে বড় ধরনের লোকসানে পড়বেন তারা। এ রোগ নিরাময়ে লিফলেট বিতরণ করে কৃষককে পরামর্শ দিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিন কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কয়েক দিন থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে আলু গাছে লেটব্লাইট রোগ দেখা দিয়েছে। কীটনাশক ছিটিয়েও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
সদর উপজেলার ধারকি গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে ১১ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। তার প্রায় অর্ধেক জমিতে পচাকানা রোগ দেখা দিয়েছে। রোগের কারণে আলুর উৎপাদন অর্ধেক হবে এমন আশঙ্কা তার। যাদের জমিতে বেশি রোগ দেখা দিয়েছে, তাদের অনেকেই আক্রান্ত জমি থেকে আলু তুলে বিক্রি করছেন। ওই জমিতে বিঘা প্রতি আলুর ফলন ৩৫ থেকে ৪০ মন করে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, রোগ বালাই না হলে ৭০ দিন বয়সের আলু জমি থেকে তুলতে পারলে ফলন কম করে হলেও ৭০-৮০ মন হতো।
ওই গ্রামের খায়রুল ইসলাম জানান, তার এক বিঘা আলুক্ষেত পচাকানা রোগে আক্রান্ত।
ক্ষেতলাল উপজেলার আমিড়া গ্রামের কৃষক হাফিজার রহমান জানান, আগাম জাতের লাগানো আলু বিক্রি প্রায় শেষ। জেলায় নমলা জাতের আলুর চাষ বেশি হয়। এবার আবহাওয়ার কারণে নমলা জাতের আলু গাছে ব্যাপক পচাকানা রোগ দেখা দিয়েছে। ওষুধ ছিটিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রোগটা বেশি মনে হচ্ছে। হয়তো বিরূপ আবহাওয়ার কারণে। কৃষকের খুব ক্ষতি হবে। এবার সার বীজ, মজুরিসহ সব কিছুর দামও বেশি। গত বারের তুলনায় আলু আবাদে অনেক বেশি খরচ হয়েছে।
জয়পুরহাট জেলায় দুই ভাগে আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। মৌসুমের শুরুতে ভিটা মাটিতে আগাম জাতের আলু চাষ হয়ে থাকে। এরপর আমন ধান কেটে যে আলু লাগানো হয় তাকে স্থানীয় ভাষায় নমলা জাতের আলুর আবাদ বলা হয়। নমলা জাতের আলুর ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় এবার আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে। এ পরিমাণ জমি থেকে আলু উৎপাদন হবে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ মেট্রিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান, বিরুপ আবহাওয়াজনিত কারণে লেটব্লাইট রোগ কিছুটা দেখা দিয়েছে। ঠান্ডা আবার রাতে কখনো একটু গরম, এবং রোদ না থাকার কারণে আলু খেতে এ রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে আলু খেত রক্ষা করতে কৃষকদের করণীয় নিয়ে পরামর্শমূলক লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। মাঠে গিয়ে কখন কোন ওষুধ দিতে হবে সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক আলু চাষিদের পরামর্শ দিয়ে কৃষি বিভাগ কাজ করছে। আবহাওয়া ভালো হলে এ রোগের প্রকোপ কমে আসবে।
মন্তব্য করুন