চিকিৎসক না হয়েও ‘নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ’ পরিচয়ে একটি ক্লিনিকে চেম্বার খুলে রোগী দেখছিলেন ফারুক হোসেন রুবেল। তাকে ধরতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেন নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. হাসিবুর রহমান। অবশেষে তিনি ধরা খেলেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে দেওয়া হয় সাজা।
শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে নীলফামারী শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকার মদিনা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে ওই ভুয়া চিকিৎসককে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে খবর দেন সিভিল সার্জন ডা. হাসিবুর রহমান। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ভুয়া চিকিৎসক ফারুক হোসেনকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সেই সঙ্গে মদিনা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সিলগালা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সিভিল সার্জন ডা. হাসিবুর রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিয়াজ উদ্দিন।
সাজাপ্রাপ্ত ফারুক হোসেন রুবেল (৪৫) রংপুর জেলা শহরের ময়নাকুঠি নীলকন্ঠ এলাকার বাসিন্দা। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সিং বিভাগের সুপারভাইজর হিসেবে কর্মরত বলে দাবি করেন। ওই ভুয়া চিকিৎসক মদিনা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে চেম্বার খুলে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহে দুই দিন চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন।
সিভিল সার্জন ডা. হাসিবুর রহমান জানান, ভুয়া চিকিৎসক ফারুক হোসেন রুবেল অন্য এক চিকিৎসকের নাম ও পদবি ব্যবহার করে মদিনা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে চেম্বার করে আসছেন মর্মে লিখিত অভিযোগ করেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিউরো মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রবিউল ইসলাম। শুক্রবার ১২টার দিকে ওই ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে গিয়ে সিভিল সার্জন দপ্তরের একজন কর্মকর্তাকে রোগী সাজিয়ে ওই ভুয়া চিকিৎসকের চেম্বারে প্রবেশ করেন সিভিল সার্জন ডা. হাসিবুর রহমান।
এরপর ওই ভুয়া চিকিৎসককে তার সনদপত্র, রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ তার ব্যবহৃত ডিগ্রির কাগজপত্র দেখাতে বললে তিনি তালবাহানা শুরু করেন।
এক পর্যায়ে স্বীকার করেন তিনি চিকিৎসক নন। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নার্সিং বিভাগের সুপারভাইজর হিসেবে কর্মরত। অন্য এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম ও পদবি ব্যবহার করে চিকিৎসক সেজে সপ্তাহে দুই দিন মদিনা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে চেম্বার খুলে রোগী দেখছিলেন। তার স্বীকারোক্তি এবং অভিযোগের সত্যতা মেলায় ফারুক হোসেন রুবেলকে আটক করা হয়।
পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিয়াজ উদ্দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ফারুক হোসেন রুবেলকে এক বছরের কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। পাশাপাশি ভুয়া চিকিৎসককে চেম্বার করার জায়গা দেওয়ায় মদিনা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকটি এক মাসের জন্য সিলগালা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে মদিনা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকের মালিক জেলা শহরের রশিদুল ইসলামের দাবি, ভুয়া চিকিৎসকের বিষয়টি অজানা ছিল তার। তিনি বলেন, ‘ফারুক হোসেন রুবেলের কাছে বার বার তথ্য চাওয়া হলে তিনি সময়ক্ষেপণ করে শুক্রবার কাগজপত্র দিতে চেয়েছিলেন।’
অপরদিকে ফারুক হোসেন রুবেল দাবি করে বলেন, ক্লিনিক মালিক রশিদুল ইসলাম ও তার ছেলে লাবিভের অনুরোধে এসে মদিনা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার রোগী দেখে চিকিৎসাপত্র দিয়ে আসছি।
এ সময় তিনি বলেন, আমি ভুল করেছি। আমায় ক্ষমা করে দেন। সরকারি চাকরি করি, আমায় ক্ষমা ভিক্ষা দেন।’
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল ২০১০ সালের আইন অনুযায়ী ভুয়া চিকিৎসক ফারুক হোসেন রুবেলকে শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে মদিনা ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকটি সিলগালা করে এক মাসের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
নীলফামারী সদর থানার পরিদর্শক মো. তানভীরুল ইসলাম জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজাপ্রাপ্ত ফারুক হোসেন রুবেলকে বিকেলে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মন্তব্য করুন