টেকনাফের হোয়াইক্যং উলুবনিয়ায় একটি বসতবাড়িতে মিয়ানমার থেকে ছুড়ে আসা গুলি আঘাত করেছে। রাইফেলের গুলিটি এলাকায় এসে পড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও বাহিনীটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) টেকনাফ হোয়াইক্যং উলুবনিয়া এলাকায় নুরুল ইসলামের বাড়িতে গুলিটি আঘাত করে।
টেকনাফ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, শনিবার বিকেলে একটি বাড়িতে রাইফেলের গুলি এসে পড়ে। খবর পেয়ে দ্রুত সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে। এখনো স্থানীয় লোকজনকে সরানো হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজন নিরাপদে সরানো হবে।
তথ্য মতে, বিদ্রোহীদের আক্রমণে দিশেহারা মিয়ানমারের জান্তা সরকার। দেশটির সেনাবাহিনী ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারানো এলাকা পুনরুদ্ধারে স্থল অভিযান শুরু করেছে।পাশাপাশি বিদ্রোহীদের দমনে তাদের ওপর চলানো হচ্ছে বিমান হামলাও। দুপক্ষের সংঘাতে গোলাগুলির ভয়ানক শব্দে মিয়ানমারের সীমান্ত ঘেঁষা বাংলাদেশি বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গা শিবিরেও।
স্থানীয়রা জানান, উখিয়ার পালংখালী এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ও শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে ভারী গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সীমান্তে বসবাসকারীরা। ২৬ জানুয়ারি (শুক্রবার) বিকেল থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত গোলাগুলির প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেছে। এর মধ্যে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড উলুবনিয়া এলাকার নুরুল ইসলামের বসতবাড়িতে একটি এলএমজির গুলি এসে পড়ে।
গৃহকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ওপারের মর্টারশেল ও ভারী গুলির শব্দ এপারে ভেসে আসে। আমরা ভয়ে নিরাপদে সরে গেছি। বিকেলে একটি গুলি বসতঘরের টিনের দরজা ভেদ করে বাড়িতে ঢুকে পড়ে। ভাগ্যক্রমে আমরা রক্ষা পেয়েছি। বিজিবির সদস্যরা খবর পেয়ে গুলিটা নিয়ে যান।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আদনান চৌধুরী বলেন, ঘটনার পর পরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি মিয়ানমারে গোলাগুলি চলতে থাকে তবে ২০১৭ সালের মতো আবারো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। এ ছাড়া জান্তা বাহিনীর আক্রমণ সামাল দিতে না পারলে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি এবং স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকজন বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। এ অবস্থায় সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গেল কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গেলাগুলির শব্দ হচ্ছে। যদি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরকান আর্মি পেরে উঠতে না পারে সেক্ষেত্রে আমার ধারণা মতে আরকান আর্মিরা বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়তে হবে যদি রোহিঙ্গাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
ঘুমধুমের বাসিন্দা ও সমাজসেবক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘুমধুম সীমান্তে কয়েক দিন ধরে তেমন ভারী গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে অন্য এলাকায় থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে। ফলে স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক রয়েই যাচ্ছে। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে মিয়ানমারে থাকা রাখাইন সম্প্রদায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারে।
যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সব সময় সতর্ক রয়েছে জানিয়ে ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সীমান্তের ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ রাখতে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, মিয়ানমারে যা হচ্ছে তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্তে টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। যাতে নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা কিংবা বিদ্রোহী গোষ্ঠী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তেমন কোনো উত্তেজনা কাজ করছে না বলে জানিয়েছেন এপিবিএন-৮-এর অতিরিক্ত ডিআইজি আমীর জাফর। তিনি বলেন, ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে কঠোর অবস্থান রয়েছি। ক্যাম্পে উত্তেজনা ছড়ানো কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
মন্তব্য করুন