চিকিৎসক নেই, নেই পর্যাপ্ত নার্সসহ কর্মচারী। অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে ৪০ বছর আগের কেনা একমাত্র এক্স-রে মেশিনটিও। এ অবস্থায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাজিবপুর উপজেলার বিভিন্ন চরের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও এখন পর্যন্ত ৫০ শয্যার জনবল নিয়োগের অনুমোদনই পাওয়া যায়নি। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল দিয়েই কোনোমতে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। অথচ ৩১ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যেই নেই ৩২ জন।
এরমধ্যে একজন ডেন্টাল সার্জন, একজন মেডিকেল অফিসার ও চারজন জুনিয়র কনসালটেন্ট থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও। একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার থাকলেও নেই তার কোনো সহযোগী। ঘাটতি রয়েছে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, কম্পাউন্ডার ও নার্সেরও। দুজন মেডিকেল অফিসার, একজন আরএমও ও একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ।
মেডিকেল অফিসাররা নামে মাত্র উপস্থিত থাকলেও দিনের অধিকাংশ সময়ই তাদের পাওয়া যাচ্ছে না হাসপাতালে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের ক্ষেত্রে এ চিত্র আরও ভয়াবহ। মাসের বেশিরভাগ দিনই অনুপস্থিত থাকছেন প্রশিক্ষণের কথা বলে।
কুড়িগ্রাম জেলা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের মানুষ রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলায় চলে যাচ্ছে। এতে করে গরিব অসহায় মানুষগুলোর চিকিৎসাসেবা পেতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় রোগী যাত্রাপথেই মারা যাচ্ছে।
রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা কোদালকাটি চরের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, এখানে এলে সময়মতো ডাক্তার পাওয়া যায় না।কোনো টেস্ট দিলে বাইরে থেকে করাতে হয়। তাই আমরা বাধ্য হয়ে জামালপুর যাই। কিন্তু সেখানে যেতে অনেক সময় লাগে আবার খরচও অনেক বেশি।
মোহনগঞ্জের বড়বের চর থেকে আসা বাবলু মিয়া বলেন, আমার বউয়ের ডেলিভারি কেস নিয়ে এসেছিলাম রাজিবপুর হাসপাতালে। কিন্তু এখানে যে অবস্থা বাধ্য হয়ে রৌমারী হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।
রাজিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সংকট ও এমন বেহাল অবস্থা নিয়ে কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার সরোয়ার জাহানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এখানে কোনো ডাক্তার থাকতে চান না। মাত্র চারজন চিকিৎসক ও সামান্য কিছু কর্মচারী দিয়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল চালাতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। তবে আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
মন্তব্য করুন