মীর ফরহাদ হোসেন সুমন, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:০৪ পিএম
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:২১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

খালে নেই মাছ, আছে আবর্জনা

আবর্জনায় ভরে আছে খাল। ছবি : কালবেলা
আবর্জনায় ভরে আছে খাল। ছবি : কালবেলা

যে খালের পানিতে থাকার কথা মাছ, সে পানিতে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা ও পোকামাকড়। যে পানি গোসলসহ গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার হতো, সে পানি এখনো কালো রং ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অস্তিত্ব হারিয়েছে জীববৈচিত্র্য, বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে পরিবেশ।

লক্ষ্মীপুর শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী রহমতখালী খালে দেখা যায় এ দৃশ্য। লক্ষ্মীপুর বাজারে এ দৃশ্য দেখে মনে হবে খালটি রহমতের বদলে আশপাশের লোকজনের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে দখল এবং দূষণের ফলে এমন ভয়াবহ চিত্র খালটির। মানবসৃষ্ট সংকটে খালটি এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।

এটিকে একসময় নদী নামে ডাকা হলেও কালের বিবর্তনে এটি খালে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু এখন সেই খালেরও অস্তিত্ব হারানোর পথে। দখলে-দূষণ এবং সংস্কারের অভাবে খালের বিভিন্ন স্থান সংকুচিত হয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেবে অনুযায়ী খালটির ৪০ কিলোমিটার লক্ষ্মীপুর অংশে। এটি সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত।

খালটি বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের পাশাপাশি বোরো মৌসুমে মেঘনা নদী থেকে জোয়ারের পানি ঢুকে ইরি চাষাবাদের জন্য আশীর্বাদ ছিল। আর মৎস্যজীবীদেরও অয়ের উৎস্য ছিল খালের মাছ। তিন যুগ আগেও খাল দিয়ে চলাচল করত মালবাহী নৌকা। এসব কিছু এখন যেন গল্পের মতো।

পৌর শহর এলাকায় খালটির দৈর্ঘ্য আনুমানিক ৫ কিলোমিটার। এ অংশটি দূষণমুক্ত রাখার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। এজন্য প্রতি অর্থবছরের এডিবির অর্থ বরাদ্দও হয়। কিন্তু খালটি কখনো দূষণমুক্ত হয়নি। তাই পৌর কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছে স্থানীয় লোকজন। আবার পৌর কর্তৃপক্ষ দায়ী করছে পৌরবাসীর অসচেতনতাকে।

খালের দুইপাড়ে থাকা বেশিরভাগ ভবনের সেপটিক ট্যাংকের লাইন খালের ওপর। এতে মানববর্জ্য এসে পড়ছে খালের পানিতে। আবার অনেক ভবনের সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য পরিষ্কার করে ফেলা হয় খালে। আর গৃহস্থালির যত আর্বজনা রয়েছে, সব খালের মধ্যে পড়ছে।

ভয়াবহ অবস্থা পৌরসভার বাজার এলাকা ও মান্দারী বাজার এলাকায়। এ দুই বাজারে খালের অস্তিত্ব এখন সংকটের মধ্যে। দখল এবং দূষণ সবচেয়ে বেশি এ দুটি স্থানে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রতমতখালী খালের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ পৌর বাজারের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে। বাজারের অংশ এখন আবর্জনায় ভরপুর। সেগুলো পচে পোকামাকড়ের সৃষ্টি হয়েছে।

বাজারের কয়েকটি মুরগি দোকানের পেছনের অংশ রয়েছে খালের ওপর। খোদ পৌর কর্তৃপক্ষ ওই দোকানগুলো নির্মাণ করেছে। বাজার ব্রিজ অংশের পূর্ব এবং পশ্চিম পাশের ভবনগুলোর একাংশ খালের ওপর। এতে ওইস্থান দিয়ে খালটি পুরো সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

বাজারের মাংস হাটার পাশ দিয়ে থাকা খালের এ অংশটির কারণে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে ভয়ানকভাবে। ওই অংশে গরু-ছাগল এবং হাঁস-মুগির বিষ্ঠা এবং এসব প্রাণী জবাইয়ের রক্ত ও উচ্ছিষ্ট সরাসরি পড়ছে খালের পানিতে। দোকানের মরা মুরগিও ফেলা হচ্ছে সেখানে।

স্থানীয় বাসিন্দা বাদশা বলেন, আমাদের ঘরের সামনে দিয়ে খাল। খালের পানিতে পোকামাকড়, মশামাছি, এবং দুর্গন্ধের কারণে আমাদের বসবাস করা কষ্ট হয়। শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বাজারের এ অংশটি অন্তত পরিষ্কার রাখার জন্য আমরা বারবার পৌর মেয়রকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কখনো পরিষ্কার রাখা হয়নি। পৌর কর্তৃপক্ষ পারে বাজারের ব্যবসায়ীদের ময়লা আর্বজনা খালে না ফেলে অন্যত্র ফেলার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু কখনো কোনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি পৌরসভা।

খালপাড় সংলগ্ন বাসিন্দা ফাহাদ ও খলিল বলেন, বাজারের কয়েকটি স্থানে খাল দখল হয়ে আছে। বিভিন্ন ভবনের পেছনের অংশ খালের মধ্যে। এতে খাল সংকুচিত হয়ে গেছে। বাসাবাড়ি ও বাজারে ময়লা আবর্জনাতে খাল ভরাট হয়ে আছে। পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকায় খালের পানি ব্যাপকভাবে দূষিত হয়ে আছে।

বৃদ্ধ সফিক উল্যা বলেন, এ খাল দিয়ে মালবাহী নৌকা চলত। আমরা নিজেরাও খাল দিয়ে চলাচল করেছি। কিন্তু এখন খালের যে অবস্থা, এখনকার মানুষ সেগুলো বিশ্বাস করবে না।

৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, এ খাল থেকে মাছ শিকার করে বিক্রি করতাম। এক সময় প্রচুর মাছ ছিল। এখন মাছের পরিবর্তে ময়লা-আর্বজনার পোকা কিলবিল করছে।

পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া বলেন, দখল এবং দূষণের কারণে খালের অবস্থা একেবারে বেহাল। বাজারে ময়লা আর্বজনা এবং বাসাবাড়ির ময়লার পাইপ লাইন খালে দেওয়া হয়েছে। মানুষ সচেতন না। এ কারণে তারা খালটি দূষণ করছে। আমরা মাঝেমধ্যে খাল পরিষ্কার করি। কিন্তু অসচেতন মানুষরা আবার খাল দূষণ করে ফেলে। লোকজনকে সচেতন করা গেলে এবং খালকে বেদখল করা গেলে অস্তিত্ব টেকানো যাবে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের রায়পুর পওর বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী গোকুল চন্দ্র পাল বলেন, রতমতখালী খালের ১৮ কিলোমিটার খনন করার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। খালটি সংস্কার করা গেলে দূষণ রোধ হবে।

লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহ বলেন, অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইবনে সিনায় চাকরি, বেতন ছাড়া পাবেন আরও বিভিন্ন সুবিধা

চট্টগ্রামের চকবাজারে ট্রান্সকম ডিজিটালের নতুন শোরুম উদ্বোধন

পুরুষদের নয়, পিতৃতন্ত্রকে অপছন্দ করি : বাঁধন

অনুভূতিহীন তথাকথিত কবি-শিল্পীরা ১৫ আগস্ট শোক জানিয়েছে : রিজভী

সুখবর পেলেন নারীঘটিত কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাওয়া ক্রিকেটার

অডিশনের সময়ে বিদ্যা আমাকে গালাগাল করেছিল : বিধু বিনোদ 

দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ফাইবার ও পলিমার সম্মেলন ২৬ ও ২৭ আগস্ট

দুধ দিয়ে কফি খাচ্ছেন, এই অভ্যাস ভালো নাকি ক্ষতিকর জানাল গবেষণা

পর্যটক বাড়াতে বিনামূল্যে বিমানের টিকিট দেবে থাইল্যান্ড

দুর্নীতির মামলায় খালাস পেলেন বিএনপি নেতা সেলিম ভূঁইয়া

১০

সারা দেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৭২৭

১১

দ্বিতীয় পাকিস্তানি হিসেবে ইতিহাস গড়লেন আমির

১২

দীর্ঘ বিরতির পর ২৩ আগস্ট আসছে কোক স্টুডিওর ৪র্থ গান

১৩

হবু স্বামীর সঙ্গে কথা বলা কি জায়েজ?

১৪

পরীক্ষা শুরুর আগে হলেই কলেজছাত্রীর মৃত্যু

১৫

সীমান্তে ১১ বাংলাদেশিকে আটকের পরে ফেরত দিল বিএসএফ

১৬

বিস্ফোরণ মামলায় ফখরুলসহ ৬৫ জনকে অব্যাহতি

১৭

রাঙামাটিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দুদকের অভিযান

১৮

আর্জেন্টিনায় ম্যাচ চলাকালে সমর্থকদের তুমুল মারামারি

১৯

আশুলিয়ায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জুয়েল গ্রেপ্তার

২০
X