ভরা মৌসুমেও শেরপুরের গজনী অবকাশকেন্দ্রে চলছে পর্যটক খরা। দেশের উত্তরের গারো পাহাড়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখর থাকলেও এবার পর্যটকের তেমন আনাগোনা নেই। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এ পরিস্থিতির জন্য জাতীয় নির্বাচন ও শীতের তীব্রতা বেশি থাকাকে মূল কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, দূরের দর্শনার্থীদের আবাসিক সুবিধা এবং নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা পর্যটকদের দূরে ঠেলে দিচ্ছে।
প্রতি বছর এ সময়ে দর্শনার্থীরা শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য অবলোকন করতে আসেন। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকে প্রাণচাঞ্চল্য। ডিসেম্বরের শুরু থেকে সরকারি ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকায় মানুষের ঢল নামে। আর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ভিড় জমায়।
তবু যে কয়জনের দেখা মিলছে তাদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। মানিকগঞ্জ থেকে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা রহিম তালুকদার বলেন, এতো দূর থেকে এক দিনের ভ্রমণ কষ্টকর। থাকার মতো জায়গা না থাকায় ছেলে-মেয়ে রেখে শুধু স্বামী-স্ত্রী এসেছি।
ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থেকে আসা স্কুল শিক্ষক হাকিম আহমেদ এখানে ঘুরতে এসে অখুশি। তিনি বলেন, প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রছাত্রী নিয়ে এখানে এসেছি। যার অর্ধেকের বেশি মেয়ে। মেয়েদের সমস্যা হলে নিরাপত্তা কে দেবে? নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর দাবি তার।
পর্যটনকেন্দ্রটির ব্যবসায়ী ছানুয়ার হোসেন বলেন, এবার ব্যবসা একেবারে খারাপ। দিন দিন ব্যবসা খারাপ হচ্ছে। এখানই দর্শনার্থী বাড়ানোর জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
বোট ক্লাবের ম্যানেজার এরশাদ হোসেন বলেন, ব্যবসা একেবারে লসের দিকে। এই ফেব্রুয়ারি মাসটাই আমাদের মূল সময়। এই মাসে ব্যবসা না হলে একেবারে লস হয়ে যাবে।
ফটোগ্রাফার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি রিয়াজ খন্দকার বলেন, এখানে পঞ্চাশের অধিক ফটোগ্রাফার আছেন। মানুষই নেই; ব্যবসা কী দিয়ে হবে। কেন্দ্রটি জমজমাট করতে সরকারের কিছু করা দরকার।
শেরপুর জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল খাইরুম বলেন, পর্যটকদের নিরাপদে ভ্রমণের জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ স্টেশন স্থাপনের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ইতিমধ্যে মোটেল স্থাপনের জন্যও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৩ সালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নে ৯০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা হয় গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি। ধাপে ধাপে পর্যটন কেন্দ্রটিতে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন লেক, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, বাহারি গাছের পাহাড়ের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা সড়ক, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, পাহাড়ের বুক জুড়ে তৈরি হয়েছে সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে ও কৃত্রিম জলপ্রপাতসহ নানা স্থাপনা। গত বছর এখানে যুক্ত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ব্রিজ, ক্যাবল কার ও জিপ লাইনিংসহ বেশ কিছু স্থাপনা।
মন্তব্য করুন