ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:০০ এএম
অনলাইন সংস্করণ

নেই দুই হাত, তবুও থামাতে পারেনি তাকে

হাত না থাকায় পা দিয়ে লেখে আসাদুল। ছবি : কালবেলা
হাত না থাকায় পা দিয়ে লেখে আসাদুল। ছবি : কালবেলা

জন্ম থেকেই নেই দুই হাত। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা তবু হার মানাতে পারেনি জন্মপ্রতিবন্ধী আসাদুল ইসলামকে।

আসাদুলের বাড়ি কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শিদলাই ইউনিয়নের শিদলাই ৮নং ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া এলাকার। আসাদুল ইসলাম (১০ ) ওই এলাকার মৃত সুমন মিয়ার ছেলে।

শারীরিক অক্ষমতা ও পারিবারিক দারিদ্রতা আসাদুল ইসলামের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা আটকিয়ে রাখতে পারেনি। পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছেশক্তি নিয়ে সে শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে হাত না থাকলেও পা দিয়ে লিখেই চালিয়ে যাচ্ছে পড়াশোনা। সে এখন স্থানীয় একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। স্থানীয়রা মনে করছেন অনেক প্রতিবন্ধীর জন্য আসাদুল ইসলাম আশার প্রেরণা।

আসাদুল ইসলামের বাবা সুমন মিয়া রাজমিস্ত্রী ছিলেন। সামান্য আয় দিয়েই কোনোমতে চলত তাদের ৬ সদস্যের সংসার। গেল বছর তার বাবা সুমন মিয়া মারা যান। তারপর থেকে নানাবাড়িতেই থাকে আসাদুল। নানি কোহিনূর আক্তার অভাবের ভার নিয়েও তার ভরণপোষণ ও পড়াশোনা করাচ্ছেন। এই টানাপোড়েনের সংসারে কোহিনূর আক্তার তার নাতি আসাদুল ইসলামের পরিচর্যা ও পড়াশোনার অদম্য আগ্রহে অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন।

আসাদুলের নানি কোহিনূর বেগম বলেন, একেতো আমার অভাবের সংসার, তার ওপর আমার নাতির লেখাপড়া করাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তার দুটি হাত না থাকায় গোসল, খাওয়া-দাওয়াসহ সকল কিছু আমাকেই করাতে হচ্ছে। তারপরও আমার নাতি আশাদুলের ইচ্ছায় আমি তাকে লেখাপড়া করাচ্ছি। তারও ইচ্ছা লেখাপড়া করে একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার।

তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে অল্প বয়সে বিধবা হয়। তারপর থেকে আসাদুল আমার বাড়িতেই থাকে। আমার বিধবা মেয়ের কষ্ট কিছুটা কমানোর জন্যই আসাদুলকে আমার বাড়িতে নিয়ে এসেছি। কিন্তু আমারও স্বামী নেই। আমারও চলতে খুবই কষ্ট হয়। এর ওপর আবার আসাদুলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে হচ্ছে। যদি সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় তাহলে আসাদুলের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে কোনো বাধা থাকবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা শামীম আহমেদ বলেন, দুই হাত ছাড়াই জন্ম নিয়েছিল আসাদুল। পড়াশোনা করতে হাতের প্রয়োজন থাকলেও সে তার শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পা দিয়েই লেখার কাজ করছে। পড়াশোনার প্রতি তার অদম্য ইচ্ছা। সে নিয়মিত স্কুলে আসা-যাওয়া করে। সে একজন মেধাবী ছাত্র।

আসাদুলের স্কুলশিক্ষকরা জানান, আসাদুল প্রতিদিন নিয়মমাফিক স্কুলে আসা-যাওয়া করে। সে লেখাপড়াতেও অনেক ভালো। মাঝে মাঝে কলম, খাতাপত্র দিয়েও সহায়তা করি। সমাজের বিত্তবানরা আসাদুলের সাহায্যে এগিয়ে এলে সে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।

শিদলাই ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলাউল আকবর বলেন, আসাদুল জন্মগত প্রতিবন্ধী। পড়াশোনার প্রতি তার প্রচণ্ড আগ্রহ রয়েছে। শুনেছি সে ভালো ছাত্র। তার সঠিক পরিচর্যা ও সহযোগিতা প্রয়োজন। আমার পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করছি। শিদলাই ইউনিয়ন প্রবাসী মানবসেবা সংগঠন তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে বলে আমাকে অবহিত করেছে। পাশাপাশি এভাবেই বিত্তবানরা আসাদুলের পাশে দাঁড়ালে একদিন সে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পড়াশোনা করে তাক লাগিয়ে দেবে বলে আমার বিশ্বাস।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাকরি দিচ্ছে দারাজ, কাজ করতে পারবেন নিজ নিজ জেলায়

তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে : টুকু

‘জুলাই সনদ’ নিয়ে লিখিত মতামত দিল বিএনপি

‘সিলেটে পাথর লুটে জড়িতদের পুরো তালিকা প্রকাশ করবে প্রশাসন’

নির্ধারিত সময়ে হয়নি ওষুধের তালিকা হালনাগাদ ও মূল্য নির্ধারণ প্রতিবেদন

পরশু, তরশু নাকি আজই?

রাতে ফোন চার্জে রেখে ঘুমালে কি ফোনে আগুন লাগতে পারে?

স্ত্রীর প্রতারণার ভয়ংকর বর্ণনা দিলেন শওকত

যে ৩৩ ওষুধের দাম কমিয়েছে ইডিসিএল

ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী!

১০

বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস হাসপাতালে ভর্তি

১১

দ্বিতীয় ধাপে কলেজ পেতে যা করতে হবে শিক্ষার্থীদের, জানাল শিক্ষা বোর্ড

১২

দেশকে আর তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে দেব না : চরমোনাই পীর

১৩

ভারতের মাটিতে আ.লীগের তৎপরতা নিয়ে ২ দেশের পাল্টাপাল্টি অবস্থান 

১৪

শিক্ষককে ছাত্রীর ছুরিকাঘাত, থানায় মামলা

১৫

৫০ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীর বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি

১৬

হোটেলকক্ষে গোপন ক্যামেরা? মোবাইল দিয়ে শনাক্ত করবেন যেভাবে

১৭

আলোচিত সেই কৃষি কর্মকর্তা বদলি

১৮

আমির খানের গোপন সন্তান থাকার অভিযোগ ভাই ফয়সালের

১৯

জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজ পায়নি ৫৭৬৫ জন

২০
X