রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ২০ আশ্বিন ১৪৩২
যশোর ব্যুরো
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৪ পিএম
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

যশোর পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে জনমনে স্বস্তি

যশোর পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। ছবি : কালবেলা
যশোর পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান। ছবি : কালবেলা

যশোরে একের পর এক হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংঘটিত হওয়ায় সাঁড়াশি অভিযানে নেমেছে জেলা পুলিশ। পুলিশের চলমান অভিযান স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে জনমনে। গত দেড় মাসের ব্যাবধানে জেলায় ১২ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া জেলা শহরে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে চাঁদাবাজি, মাদককারবারি ও কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় শিরোনাম হতে শুরু করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই জেলা শহর। তবে এসবের নেপথ্যে থাকা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের পদধারী নেতা এবং জনপ্রতিনিধি হওয়ায় জিম্মি হয়ে পড়ে ভুক্তভোগীরা।

অপরাধীরা রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী হওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম মেনে নিয়েও পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছিলেন না ভুক্তভোগীরা। তবে, সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সন্ত্রাস দমনে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। সপ্তাহের ব্যবধানে পুলিশের সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে একজন পৌর কাউন্সিলরসহ অন্তত ২৫৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে অস্ত্র ও মাদক। এসব ঘটনায় পৃথক ১০৩টি মামলা হয়েছে। পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলমান থাকায় ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থাকা অনেক বিতর্কিত জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে চলে গেছে।

সন্ত্রাস দমনে পুলিশের কঠোর এ ভূমিকা এতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজে প্রশংসিত হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত না হয়ে অপরাধীদের অন্য পরিচয় বিবেচনায় না নিয়ে এ সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করায় প্রসংসায় ভাসছেন জেলার পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার।

তবে পুলিশের এ অভিযান নিয়ে স্থানীয় এমপি কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন জনপ্রতিনিধি প্রশ্ন তুলে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে অভিযান বন্ধের জন্য সাফাই গেয়েছেন এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা করেছেন। যদিও আওয়ামী লীগের বৃহৎ আরেকটি পক্ষ পুলিশের অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও গণমাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে থেকে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি যশোর সরকারি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে হানা দেওয়ার ঘটনায় বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা মেহবুব রহমান ম্যানসেলসহ তার তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। একইদিন রাতে যশোর পৌরসভার আলোচিত কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলন ওরফে টাক মিলনকে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করা হয়। কাউন্সিলর মিলনের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরক, মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে ডর্জনের বেশি মামলা রয়েছে। এছাড়াও গত কয়েকদিনে শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসী একাধিক মামলার আসামি পৌর কাউন্সিলর সাইদুর রহমান রিপন ওরফে ডিম রিপন, কাউন্সিলর সায়েদ হোসেন নয়ন ওরফে ডিম রিপনের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে।

এসব অভিযানকে রাজনৈতিক আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের প্রত্যাহার দাবি করে যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী বলে পরিচিত কয়েকজন জনপ্রতিনিধি। তবে ওই সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া জনপ্রতিনিধিরা কর্মবিরতির হুমকি দিলেও বাস্তবে তা দেখা যায়নি। এছাড়াও ওই সংবাদ সম্মেলনে একাধিক মামলার আসামি ও বিতর্কিত জনপ্রতিনিধি, ভূমি দখল-চাঁদাবাজি কাজে জড়িত, কিশোর সন্ত্রাসীদের গডফাদার হিসেবে পরিচিত জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি থাকা নিয়েও সমালোচনার জন্ম দেয়। যদিও জেলার অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিরা পুলিশি অভিযানকে সাধুবাদ জানাতে দেখা যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর শহরের মোড়ে মোড়ে পুলিশের তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসীকে ছুরিসহ আটক করা হয়েছে। শহরে পুলিশের তৎপরায় সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। তবে আতঙ্কে আছে বির্তকিত জনপ্রতিনিধি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের একাধিক বাসিন্দা জানান, পাড়ায় পাড়ায় কিশোর গ্যাং বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি, মাদক, খুন, জখমের ঘটনা ঘটছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। পুলিশ এদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় তারা খুশি। এদের গডফাদারদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে পারলে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। মানুষ শান্তিতে থাকতে পারবে।

এদিকে, রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার জেলা শহরে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ও পুলিশি অভিযানের বিষয়গুলো উঠে আসে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, ‘অপরাধীর অন্য পরিচয় বিবেচ্য বিষয় নয়, ফলে বিশেষ কোনো পেশা কিংবা পরিচয়ে থেকেও অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।

পুলিশ সুপার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। অপরাধীদেরকে তিনি অপরাধী হিসেবেই দেখেন, দলীয় দৃষ্টিতে দেখেন না, পুলিশকেও দেখতে বলেননি। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের যান-মালের নিরাপত্তায় পুলিশের এমন অভিযান অব্যহত থাকবে।

সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার আরও বলেন, আমাদের অভিযান কোনো জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে নয়। আমরা শান্তি ও স্বস্তির যশোর নিশ্চিত করতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। যশোর শহরের পাশাপাশি অন্য উপজেলায়ও এটি চলমান রয়েছে এবং তা আরও জোরদার করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকা মহানগর আদালতে পরিচ্ছনতা অভিযান

উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে নারীসহ ফার্মাসিস্ট আটক

৮ দিন পর খাগড়াছড়িতে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার

চাঁদা না দেওয়ায় ঠিকাদারকে ডেকে নিয়ে মারধর

মাউন্ট-সেশকোর গোলে ম্যানইউর স্বস্তির জয়

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিবু প্রসাদ গ্রেপ্তার

‘শহিদুল আলম ও গাজার পাশে আছি-থাকব’

রেবতী মহাজন বাড়ির বিজয়া সম্মিলনী

জামায়াত ধর্মের জন্য ক্ষতিকর : আমিনুল হক

এভারেস্ট বেজ ক‍্যাম্প সামিট ৮ বাংলাদেশির

১০

তারেক রহমানের ৩১ দফায় দেশের উন্নয়নের কর্মপরিকল্পনা : আবু বকর সিদ্দিক

১১

মানবাধিকার কর্মীদের আটকের ঘটনা কলঙ্কজনক অধ্যায় : মুহিউদ্দীন রাব্বানী

১২

শিয়ালের কামড়ে মেম্বারসহ আহত ১১

১৩

কাশফুলের গালিচায় মোড়া বরিশালের বিসিক

১৪

উপ-সহকারীর ভরসায় চলছে ২০ শয্যার হাসপাতাল

১৫

মার্কিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক 

১৬

নদীর স্রোতে তলিয়ে গেল ৩ বোন

১৭

‘ভারতের মানচিত্রও মুছে যাবে’, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হুঁশিয়ারি

১৮

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপির কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : আনোয়ারুজ্জামান

১৯

প্রধান উপদেষ্টা ও ওসিকে হত্যার হুমকি যুবলীগ নেতার

২০
X