বাংলাদেশে জ্যৈষ্ঠ মাসকে বলা হয় মধু মাস। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, জামরুল, গাব, আনারস, আঁশফল ও তালের শাঁস- এ ফলগুলোই বেশি পাওয়া যায় এ মৌসুমে। হরেকরকম ফল পাওয়া যায় বলে এ মাসে সাধারণ মানুষ তৃপ্তি করে ফল খায়। এ মৌসুমে বিশেষ একটি ফল মানুষের কাছে আকর্ষণ করে সেটি হলো তালের শাঁস। এখন গ্রীষ্ম মৌসুমে প্রতিটি হাটবাজারে তালের শাঁসের কদর বাড়ছে। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের পছন্দ এ তালের শাঁস।
সরেজমিনে কেন্দুয়া শহর ও হাটবাজার ঘুরে দেখা দেখা গেছে, শহর কিংবা হাটে রাস্তার পাশে তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে। তালের শাঁস খেতে খুবই মজা। তাই অনেকে রাস্তার পাশে বসে খাচ্ছেন তালের শাঁস। কেউবা আবার শিশুদের জন্য তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
কেন্দুয়া খেলার মাঠের পাশে বসে তালের শাঁস বিক্রেতা আবুল কাসেম জানান, বর্তমানে তালের শাঁসের অনেক চাহিদা বেড়েছে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে এ তাল সংগ্রহ করে তারপর শহরে এনে আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন ব্যাপারীরা। আর আমরা তা খুচরা প্রতি পিস তাল ১০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এতে লাভ খুব ভালো। প্রতিদিন আমি ১০০ তাল বিক্রি করছি। সব বয়সী মানুষেরা এ তালের শাঁস খাচ্ছে। কেউবা বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে।
তালের শাঁস বিক্রেতা আবুল মিয়া জানান, আমি সারা বছরই বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত। গ্রীষ্ম মৌসুমে বিভিন্ন ফল বিক্রি করি। পাশাপাশি প্রতি বছরই তালের শাঁস বিক্রি করছি। গ্রামে বর্তমানে তালগাছ কমে যাওয়ায় তাল সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। আমরা পাইকারি হিসেবে তাল কিনছি। আগে একটি তাল ৫ টাকা করে বিক্রি করতাম কিন্তু বর্তমানে খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি পিস তাল ১০ টাকায় বিক্রি করছি। সব মানুষেরই তালের শাঁস পছন্দ। বিশেষ করে শিশুরা এ তালের শাঁস বেশি পছন্দ করে। একটি তালে তিনটি চোখ থাকে। সেই চোখের মধ্যে থাকে রস। আর এ মিষ্টি রস খেতে শিশুরা পছন্দ করে। ছোট ছোট তালের চোখে রস বেশি থাকে। একটু বড় হলে এ শাঁস শক্ত হয়ে যায়। খেতে ভালো লাগে না। সাধারণ ছোট ও মাঝারি সাইজের তাল ভালো চলে। সবাই ছোট সাইজের তাল বেশি চায়। তাই ছোট তালের চাহিদা বেশি।
তাল শাঁসের ক্রেতা সোহেল আহমেদ বলেন, আমার পরিবারের সবাই তালের শাঁস খুব পছন্দ করে। আমি সময় পেলেই তালের শাঁস কিনি। সুমিষ্ট এ ফলটি অল্প সময়ের জন্য পাওয়া যায়। তাই বাজারে দেখলেই আমি শিশুদের জন্য তা সংগ্রহ করার চেষ্টা করি।
কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এবাদুর রহমান বলেন, তাপমাত্রার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুল পড়া ইত্যাদি রোধ করতে সাহায্য করে এটি। অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে যে পানি বেরিয়ে যায় তা পূরণ করতে সাহায্য করে তালের শাঁস। গরমে শরীর ও পেট ঠান্ডা রাখে তালের শাঁস। এ ছাড়া বিভিন্ন শারীরিক সমস্যারও সমাধান করে এই ফল। তালের শাঁসে থাকে আয়োডিন, মিনারেলস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক ও ফসফরাস। বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর তালের শাঁস। নানা রোগের পথ্য হিসেবেও কাজ করে তালের শাঁস।
মন্তব্য করুন