বিকাশ চন্দ্র প্রামানিক, নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নওগাঁয় গ্রামীণ সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যান ট্রাক্টর

সড়ক দাপিয়ে চলছে অবৈধযান ট্রাক্টর। ছবি : কালবেলা
সড়ক দাপিয়ে চলছে অবৈধযান ট্রাক্টর। ছবি : কালবেলা

নওগাঁর রাণীনগরের গ্রামীণ সড়কগুলোয় দেদার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যান ট্রাক্টর। নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক, ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। একটু অসাবধানতা হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল আরোহীর দুর্ভোগ চরমে। ট্রাক্টর মূলত জমিতে ধানচাষ ও প্রধান সড়কে মালামাল বহনের জন্য ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এ ছাড়া ছোটদের হাতেও তুলে দেওয়া হচ্ছে এই অবৈধ যানের স্টেয়ারিং।

ফেব্রুয়ারি মাস মাটি খননের মৌসুম হওয়ায় বিভিন্ন গ্রামের মধ্যে পুকুর খননের মাটি বহনে ব্যবহার করা হচ্ছে এই যান। ফলে স্থায়ীভাবে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা ও সড়কগুলো। প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ সড়কগুলোয় শত শত এই যান দাপিয়ে বেড়ালেও নজর নেই প্রশাসনের।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো গ্রামে চলছে নতুন ও পুরাতন পুকুন খনন। সেই খননের মাটি বহন করা হচ্ছে ৬-৮ চাকার ট্রাক্টর দিয়ে। আর দিনরাত ট্রাক্টরের চলাচলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ জনপদের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। এ ছাড়া ইট বিছানো ও পাকা সড়কের ওপর পড়ে থাকা মাটির আস্তরণে ঘটা দুর্ঘটনায় কেউ মৃত্যুবরণ করছে আবার কেউ স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। চলমান এমন কর্মকাণ্ডে নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন।

নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে প্রতিটি ট্রাককে মাটি পরিবহনে ৩০০-৪০০ টাকা করে প্রদান করা হয়। ফলে এত কম টাকায় মাটি বহনের সুবিধা পাওয়ায় খননকারীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাড়া করে আনে ট্রাক ও ডাম্প ট্রাক। স্থানীয় বাসিন্দারা যখন অভিযোগ দেয় তখন লোক-দেখানো দু-একটি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পুকুর খননে ব্যবহৃত ভেকু মেশিন এবং খননকারীর বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড করা হলেও আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে এসব অবৈধ যানগুলো। প্রতিটি ভেকু মেশিন ও ট্রাক্টরের মালিকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ মাসোহারা নেওয়ার কারণে প্রশাসন হাতের নাগালের মধ্যে পেয়েও এই যানগুলোর বিরুদ্ধে তেমন একটা শক্তিশালী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না বলে জানা গেছে। এ ছাড়া প্রশাসনের সঙ্গে আঁতাত করে তারা এসব কর্মকাণ্ড করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার ১০ মিনিটের বৃষ্টিতে চলাচলরত রাস্তা বেহাল দশায় পরিণত হয়েছিল। বিশেষ করে মাটিবাহী ট্রাক্টর যেসব স্থানে বেশি মাটি বহন করেছে, সেখানকার অবস্থা ভয়াবহ। এই প্রতিবেদকের নওগাঁ থেকে রাণীনগর উপজেলার কুজাইল বাজারে মোটরসাইকেলযোগে যেতে প্রায় ৫০ মিনিট লেগেছে। কারণ রাস্তা ছিল পিচ্ছিল। শুধু তাই নয়, একটি ট্রাককে সাইড দিতে একটুর জন্য স্লিপ করে পড়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। অবশ্য যাওয়ার সময় একটি ভাটার কাছে দুই শ্রমিককে রাস্তা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। যা লোক-দেখানো, কোনো কাজে আসছিল না।

উপজেলার গোনা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মন্ডল জানান, অনেকেই কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নির্দিষ্ট লোকদের সঙ্গে আঁতাত করে অনেকেই নিজেদের ইচ্ছেমাফিক ফসলি জমি মাটি দিয়ে পূরণ করছেন। অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমি পূরণ করায় পানি চলাচলের পথ নষ্ট হওয়ায় পাশের জমিগুলো চাষের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে। কতিপয় লোকের প্রতি প্রশাসনের এমন স্বজনপ্রীতির কারণে আমরা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আর নষ্ট হওয়া সড়ক দিয়ে আমাদেরকেই বছরের পর বছর চরম দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে। এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে দ্রুতই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু ওবায়েদ বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার ক্ষমতা পুলিশের নেই। তাই উপজেলা প্রশাসন যখন আমাদের ডাকে তখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে গিয়ে আমরা মাঝেমধ্যে ভেকু মেশিন ও ট্রাকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করে থাকি। যদি এমন অভিযান নিয়মিত করা যেত তাহলে হয়তোবা এমন অবৈধ কর্মকাণ্ডের কিছুটা লাগাম টানা সম্ভব হতো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম মোবাইল ফোনে জানান, খবর পেলে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এমন অভিযান আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ধেয়ে আসছে অতি ভারী বৃষ্টিবলয় ‘স্পিড’, কবে কোথায় প্রভাব ফেলবে

এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিল ভারত সরকার

ইমিগ্রেশনের সময় যে ৭ কথা বললেই মহাবিপদ

সাগর-রুনির সন্তান মেঘের হাতে পূর্বাচলের প্লটের দলিল হস্তান্তর

৮ মামলায় ইমরান খানের জামিন

মাদ্রাসাপ্রধানদের জন্য অধিদপ্তরের জরুরি নির্দেশনা, না মানলে ব্যবস্থা

বরাদ্দ পেল বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

স্থিতিশীল অর্থনীতির জন্য গ্যাস উৎপাদন বাড়ানোর দাবি ব্যবসায়ীদের

কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

যে বয়সের আগেই শিশুকে ৮ শিক্ষা দেওয়া জরুরি

১০

দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা প্রধান শিক্ষকের, তদন্তে কমিটি

১১

চট্টগ্রাম-৩ আসনে ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী মিল্টন ভুঁইয়া

১২

বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা নিয়ে ‘সুখবর’ পাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা

১৩

ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় করার ৮ কৌশল

১৪

বাড়ির আঙিনায় বিষধর পদ্মগোখরা, অতঃপর...

১৫

মোবাইল দিয়েই ডিএসএলআর ক্যামেরার মতো ছবি তোলার ৫ কৌশল

১৬

বরইতলা নদীর ‘বাঁধ’ এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর

১৭

ইস্পাত খাতে বিশেষ তহবিল চান ব্যবসায়ীরা

১৮

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধিতে আগ্রহী পাকিস্তান

১৯

উপকূলজুড়ে টানা বৃষ্টিপাত, জনজীবনে দুর্ভোগ

২০
X