নিয়মবহির্ভূতভাবে সরকারি ব্যারাকের ৩০টি পুরোনো ঘরের টিনসহ বিভিন্ন মালামাল খুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে কামরুল সরকার নামের এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমানের নির্দেশে পুরোনো ঘরগুলো ভাঙা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য।
ইউপি সদস্য নিজেই কাজটি করিয়েছেন। তবে সরকারি পুরোনো মালামাল বিক্রিতে নিলামের নির্দেশনা থাকলেও তা করা হয়নি।
সরেজমিনে সদর উপজেলার চররমণী মোহন ইউনিয়নের করাতিরহাট এলাকায় গেলে ব্যারাকগুলো ভাঙার দৃশ্য নজরে পড়ে। আর পুরোনো মালামালগুলো বাজারের ওপর ইউপি সদস্য কামরুলের ব্যক্তিগত কার্যালয়ের পাশেই রাখে শ্রমিকরা। কামরুল একই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য।
ব্যারাকের পাশে থাকা ফলকে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ এর আওতায় লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমণী মোহন ইউনিয়নের করাতির হাটবাজারে ২০০৬ সালে নৌবাহিনী কর্তৃক ৩০টি টিনসেড ঘর তৈরি করা হয়।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ হয়ে থাকা ঘরগুলো পুনঃসংস্কারের জন্য অসহায় পরিবারগুলো প্রশাসনের কাছে দাবি জানায়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে নতুন ঘর নির্মাণের আশ্বাস দেওয়া হয়। সেই সূত্রে মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে ৩০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ঘরের জন্য ৩ লাখ ৪ হাজার টাকা করে বরাদ্দ রয়েছে। এজন্যই পুরোনো ঘরগুলো ভাঙা হয়েছে। অতিদ্রুত সেখানে নতুন ঘর নির্মাণ করা হবে। এরজন্য ইট এনে রাখা হয়েছে ব্যারাকের সামনে।
আশ্রয় কেন্দ্রেটির সভাপতি মোহাম্মদ বেপারি বলেন, ৩০টি পরিবারে দেড়শতাধিক মানুষ ঘরগুলোতে বসবাস করে আসছি। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে। বর্ষায় পানি ঢোকে। কয়েকবার আমরা নিজ উদ্যোগেই সংস্কার করেছি। পরে প্রশাসনের কাছে সংস্কারের দাবি জানাই। ইউএনও নতুন করে ঘর নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এজন্যই ঘরগুলো ভেঙে নেওয়া হয়েছে। আমাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এজন্য পাশেই একটি পরিত্যক্ত স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছি।
ঘর অপসারণে নিয়োজিত শ্রমিক আরিফ হোসেন ও আল আমিন সরকার জানায়, তারা চুক্তিতে ঘরগুলো ভাঙছে। এতে মেম্বার কামরুল তাদের ৯০ হাজার টাকা দেবেন। পুরোনো মালামালগুলো মেম্বারের কার্যালয়ের পাশে রাখা হয়েছে।
ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম সরকার বলেন, ইউএনও আমাকে ঘরগুলো সরিয়ে নিতে বলেছে। এ জন্য পুরোনো ঘরগুলো ভাঙা হয়েছে। ঘরগুলো অপসারণে শ্রমিকদের সঙ্গে দেড় লাখ টাকা চুক্তি হয়েছে। পুরোনো এসব মালামাল বিক্রি করে এত টাকা পাওয়া যাবে না। ক্ষতি হবে আমার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক কর্মকর্তা জানান, ব্যারাকের ঘরগুলো সরকারি। আইন অনুযায়ী ঘরগুলো ভাঙতে নিলামের জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকতে হবে। অথবা জেলা-উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক রেজ্যুলেশন করে নিলামের ব্যবস্থা করতে হবে। নিলাম ছাড়া সরকারি ঘর ভাঙার সুযোগ নেই।
বক্তব্য জানতে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, ব্যারাকটিতে যিনি যেই ঘরে ছিলেন ওই ঘরটি তিনিই ভেঙে নেবেন। এমনটিই ইউএনও আরিফুর রহমান আমাকে জানিয়েছেন। ইউএনওর নির্দেশ ইউপি সদস্য ঘরগুলো ভেঙে নিচ্ছে কি না তা আমার জানা নেই। বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলব।
মন্তব্য করুন