টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে স্কুল থেকে তুলে নিয়ে বিয়ে করা কিশোরীকে ১৩ দিন পর উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ। অভিযুক্তের বাসা থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে পরিবারের কাছে ফেরার পর গ্রামীণ সালিশের আয়োজন করা হয়। সেখানে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে ফের মৌখিকভাবে বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর অভিযুক্তের হাতে তুলে দেওয়া হয় ওই কিশোরীকে।
অভিযুক্ত হযরত আলী (৭৭) ধনবাড়ীর মুশুদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। ভুক্তভোগী কিশোরী ধনবাড়ীর একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। পরিবার দাবি করছে, তার বয়স ১৪ বছর।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) মুশুদ্দি বাজার এলাকায় সালিশ করে মেয়েটিকে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার জিম্মায় দেন স্থানীয় মাতবররা। ওই সালিশে উপস্থিত ছিলেন- ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সোহরাব মাস্টার, শাহাদৎ, আল-আমিন, ময়েন উদ্দিন প্রমুখ।
সালিশে ধনবাড়ী শহরের তিন শতাংশ জমির ওপর তৈরি হযরত আলীর বাড়ির অর্ধেক লিখে দেওয়ার শর্তে কিশোরীকে বিয়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান চলাকালে কৌশলে ভুক্তভোগীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করেন ওই চেয়ারম্যান। পরে ২০ ফেব্রুয়ারি ধনবাড়ী থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মেয়েটির বাবা।
ধনবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলীর বাসা থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে মেয়েটিকে বাড়িতে দিয়ে আসা হয়।’
উদ্ধারের পর কিশোরী জানায়, বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে হযরত আলী তাকে বাড়ি পৌঁছানোর কথা বলে মোটরসাইকেলে ধনবাড়ীর বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে জন্মসনদে ১০ ডিসেম্বর, ২০০৯-এর স্থলে শুধু সালের জায়গায় ২০০৫ লিখে ১৮ বছর বয়স দেখিয়ে জোর করে বিয়ে করে। তাকে ভয় দেখিয়ে রাজি করানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে সে।
মেয়েটির অভিযোগ, হযরত আলীর ভয়ে পাশের জেলার এক আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে থাকে সে এবং তার পরিবারের সদস্যরা। ভয় দেখিয়ে ও কৌশলে সেখান থেকে তাদের এলাকায় এনে সালিশের আয়োজন করা হয়।
কথা হয় সালিশে থাকা আফাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা তসলিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা মীমাংসার বাইরে না। বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। মেয়ের জন্ম তারিখ অনুযায়ী বিয়ের বয়স হয়েছে। স্কুলে ভর্তিতে কম বয়স দেখানো হয়েছিল। সব পক্ষের সম্মতিতে এটা হয়েছে।’
অভিযুক্ত হযরত আলীর ভাষ্য, ‘এলাকার মাতবররা বসে বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। মেয়েটির এতে সম্মতি আছে।’
ধনবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাত হোসেন বলেন, ‘মেয়ের বাবা একটি অভিযোগ দিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে মেয়েটিকে উদ্ধার করে পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’
সালিশে কিশোরীর বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়েটিকে উদ্ধারের পরে আর কী হয়েছে তা জানা নেই। তবে বেআইনি কিছু হয়ে থাকলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন