বলিউডের খ্যাতনামা অভিনেতা নানা পাটেকর অভিনীত ‘আব-তাক ছাপ্পান’ সিনেমার দুটি পার্ট একাধিকবার দেখেন ডা. রায়হান শরীফ। আর এ ছবি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অস্ত্রের প্রতি নেশা জাগে তার। তিনি একাধিক অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা করেন। দুটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, বেশ কিছু বিদেশি চাকু কিনে নিজের হেফাজতে রাখতে শুরু করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য দেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী কলেজের ছাত্রকে গুলি করা ডা. রায়হান শরীফ। তবে এছাড়া বেশকিছু তথ্য তার কাছ থেকে পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
শুক্রবার (১৫ মার্চ) দুপুরে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. রায়হান শরীফকে আদালতের মাধ্যমে আবার জেলহাজতে পাঠানো হয়।
সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মো. জুলহাজ উদ্দীন কালবেলাকে বলেন, ডা. রায়হানের নিজ হেফাজতে অবৈধ অস্ত্র রাখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, আব তাক ছাপ্পান সিনেমার দুটি পার্ট তিনি একাধিকবার দেখে অস্ত্রের ব্যাপারে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। অনেকদিন ধরেই তিনি অস্ত্রের অনুসন্ধান করছিলেন। অবশেষে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এলাকার এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পরপর দুটি বিদেশি পিস্তল কেনেন। রাজশাহীর এক পূর্ব পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে ওই অস্ত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়ে বলে জানিয়েছেন। এরপর তার কাছ থেকে গুলি কেনেন তিনি।
জুলহাজ উদ্দীন আরও বলেন, ডা. রায়হান অনলাইনের মাধ্যমে বিদেশি চাকু ও ছুরি কিনেছেন। সব অস্ত্রই তিনি শখের বশে কিনেছেন। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আরও কিছু অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা ছিল তার। অস্ত্র ব্যবহার করে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনার ছক তার ছিল না বলে জানান জুলহাজ উদ্দীন।
সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল কালবেলাকে বলেন, ডা. রায়হান শরীফকে জিজ্ঞাসাবাদে অবৈধ অস্ত্রের একজন জোগানদাতার তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি যার কাছ থেকে অস্ত্র কিনেছিলেন তিনি পেশাদার অস্ত্র ব্যবসায়ী। তার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে সেগুলো বলা যাচ্ছে না। ওই অস্ত্র ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
গত ৪ মার্চ বিকেলে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সময় কথা বলার একপর্যায়ে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালের পায়ে গুলি করেন প্রভাষক ডা. রায়হান শরীফ। ঘটনার পর পরই বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। তাৎক্ষণিক পুলিশ এসে ডা. রায়হান শরীফকে হেফাজতে নেয়। এরপর তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, ৮১ রাউন্ড গুলি ও একাধিক বিদেশি চাকু উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ছাত্র আরাফাত আমিন তমালের বাবা আব্দুল্লা-আল আমিন বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি ও গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে অপর একটি মামলা দায়ের করেন। হত্যাচেষ্টা ও ভয়ভীতি দেখানোর মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন ডা. রায়হান। অস্ত্র মামলায় অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
গত ১১ মার্চ আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৭ মার্চ শিক্ষক রায়হান শরীফকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্বাস্থ্য বিভাগ।
আর্কাইভ 
| ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ 
