ঝিনাইদহের সোসিও ইকোনমিক হেলথ এডুকেশন অর্গানাইজেশন (সিও) এনজিওর হয়রানির প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন ও অনশন কর্মসূচি পালন করেছে নির্যাতিত কর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) দুপুরে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সিও অফিসে আটকে নির্যাতন ও মিথ্যা চেকের মামলা দিয়ে হয়রানি, চাকরির সময় জমা নেওয়া শিক্ষা সনদ ফেরত ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।
নির্যাতিতদের মধ্যে ফরিদপুরের সদর শাখার সাবেক ম্যানেজার, গাইবান্ধা জেলার সুই গ্রামের এ বি এম মাহবুবুর রশিদ, ঝিনাইদহ সদর শাখার সাবেক ম্যানেজার, খুলনার মাসুদা পারভীন, সদর শাখার সাবেক ম্যানেজার, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার লক্ষিনগর গ্রামের মো. আজিজুল আলম, শৈলকুপার বাসিন্দা হিসাব রক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন ও যশোরের ঝিকরগাছা শাখার সাবেক ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, মেহেরপুরের আমদাহ গ্রামের মো. আমিরুল ইসলামসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মানববন্ধনে অংশ নেন।
জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দেওয়া লিখিত অভিযোগে চাকরিতে যোগদানের সময় ব্যাংক চেক রেখে পরে টাকার অঙ্ক বসিয়ে মামলা, মিথ্যা মামলা দেওয়া, পিএফ ফান্ডের টাকা পরিশোধ না করা, চাকরির সময় জমা নেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ফেরত না দেওয়া, চাকরিতে যোগদানের সময় প্রশিক্ষণ বাবদ ৫ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে কোনো প্রশিক্ষণ না করানো, জামানত ফেরত না দেওয়া, চাকরি করাকালীন সময় কর্মরত ব্রাঞ্চে ঋণ আদায়ের ঘাটতি সেই ব্রাঞ্চের কর্মরতদের নামে ঋণ দেখিয়ে সমন্বয় করাসহ সদস্য ভর্তি ফি হিসেবে অফেরতযোগ্য ৫০ টাকা করে রশিদ ছাড়া আদায়, ঋণ আবেদনের সঙ্গে অফেরতযোগ্য ১৩০ টাকা করে রশিদ ছাড়া আদায়, কোনো ব্রাঞ্চে আয়কর না দেওয়াসহ অনেক গুরতর অভিযোগ করেছেন। ভুক্তোভোগী এ বি এম মাহবুবুর রশিদ বলেন, আমি চাকরি ছাড়ার সময় অডিট রিপোর্টে আমার কোনো আর্থিক অনিয়ম ছিল না। চাকরি ছাড়তে চাইলে ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট আমাকে অফিসে ডেকে এনে সামছুল আলমের ভাই, ছেলে ও অন্যান্য কর্মকর্তারা মিলে রাত ৩টা পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করে। পরে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করতে রাজি হলে আমাকে ছেড়ে দেয়। পরে দেখি চাকরিতে যোগদানের সময় জমা রাখা ব্যাংক চেকে ২৯ লাখ টাকা অনিয়মের অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে। আমার পরিবারের সদস্য ও জামিনদারও মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। চাকরিতে যোগদানের সময় জমা রাখা জামানত, সার্টিফিকেট কিছুই ফেরত দেয়নি।
মেহেরপুরের আমদহ গ্রামের আমিরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সিও এনজিওর মালিক সামছুলের প্রধান ব্যবসা খোলা চেকের মামলা। তিনি বলেন, তার কাছে জমা রাখা কর্মীদের খোলা চেকে ইচ্ছামতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে গত বছর আড়াইশ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সিও এনজিওর এই রমরমা ব্যবসায় শত শত কর্মী ও ঋণগ্রহীতা পথে বসেছেন। অনেকে দেউলিয়া হয়েছেন, ভেঙে গেছে সংসার।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে আমার নামে মিথ্যা মামলা করে সিও। আদালতে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। কিন্তু আমার সার্টিফিকেট, জামানতের টাকা ফেরত দেয়নি সিও। মাসুদা পারভীন বলেন, চাকরিতে যোগদানের সময় আমার নিজ নামের ৩টি ও স্বামীর নামে ১টি ব্যাংক চেক ও আমার সকল মূল সার্টিফিকেট তাদের কাছে রেখে দিয়েছে। আমার নামে ৬৩ লাখ ১০ হাজার আত্মসাতের মিথ্যা অভিযোগ এনে আমাকে হয়রানি করছে।
মো. আজিজুল আলম বলেন, আমি বারোবাজার শাখায় কর্মরত ছিলাম। চাকরিতে যোগদানের সময় আমার নিজ নামের ৩টি ব্যাংক চেক ও জামিনদারের নামের ২টি ব্যাংক চেক জমা রাখি। আমি নিজ ইচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নিলে পরে আমার জমা রাখা ব্যাংক চেকে টাকার অঙ্ক বসিয়ে আমার নামে ঝিনাইদহ আদালতে সাড়ে ৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে। আমি চাকরি করা পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না।
এ বিষয়ে সিও এনজিওর নির্বাহী পরিচালক সামছুল আলম জানান, আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। আমি কারো কাছ থেকে খোলা চেক গ্রহণ করি না। যারা কর্মসূচি পালন করছেন তারা সবাই অর্থ আত্মসাৎ মামলার আসামি।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন