বগুড়া ধুনটে এক স্কুলছাত্রীকে তাদের বাসার ভাড়াটিয়া কলেজশিক্ষক ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর ঘটনা তদন্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে বগুড়ার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
রোববার (২৪ মার্চ) মামলার একমাত্র আসামি কলেজশিক্ষক মুরাদুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
ওই ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ধুনট থানার তৎকালীন ওসি কৃপাসিন্ধু বালা ভিডিও ফুটেজ ডিলিটসহ আলামত নষ্ট করেছেন বলে মামলার বাদী অভিযোগ করেন। সেই বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জব্দ করা তিনটি মোবাইল ফোনসেট ৪টি ল্যাবে ফরেনসিক টেস্ট করানো হয়। তবে তাতে ভিডিও ডিলিট করার কোনো তথ্য মেলেনি বলে জানিয়েছেন বগুড়া পিবিআই’র পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবির।
পুলিশ সুপার জানান, গত ২০২২ সালের ৩ মার্চ ধর্ষণ করা হয়। গত ১২ মে ওই স্কুলছাত্রীর মা ধুনট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় একই উপজেলার শৈলমারী গ্রামের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে কলেজশিক্ষক মুরাদুজ্জামানকে আসামি করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাদীর বাড়ির নিচতলার উত্তর পাশের ফ্ল্যাটে মুরাদ ভাড়া থাকতেন। মামলার বাদী এবং তার স্বামী স্কুলশিক্ষক। এ কারণে তারা কর্মস্থলে গেলে তার মেয়ে স্কুলছাত্রীকে বাসায় ডিকে নিয়ে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করত মুরাদ। গত ২০২২ সালের ১২ এপ্রিল একইভাবে তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে গেলে তার চিৎকার শুনে অন্য মেয়ে সেখানে গেলে মুরাদ পালিয়ে যায়। বাদী অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে একাধিকবার ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করে মুরাদ। পুলিশ মামলাটি গ্রহণের পর মুরাদকে আটক করে এবং তাকে ওই মামলায় জেলহাজতে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে বাদী অভিযোগ করেন যে, মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ওসি কৃপাসিন্ধু বালা আসামির মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ডিলিটসহ আলামত নষ্ট করেছেন। এ কারণে আদালতের নির্দেশে মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ সুপার এহসান বলেন, তদন্তকালে আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও প্রদান করেন। এদিকে বাদীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওসি কৃপাসিন্ধু বালার বিরুদ্ধে তিনি নিজে বিভাগীয় তদন্তের দায়িত্ব পান। তদন্তে মুরাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সবুজ আলী আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। এ ছাড়া ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তে বেশকিছু অসঙ্গতি উঠে এসেছে, সেসব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তবে ভিডিও ডিলিটের বিষয়টির প্রমাণ মেলেনি। এখনো ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলেও উল্লেখ করেন পুলিশ সুপার এহসান।
এর আগে ধর্ষণের বিচার চেয়ে ২২ মাস আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছিল বগুড়ার ধুনট উপজেলার ওই স্কুলশিক্ষার্থী। এরপর ২২ মাস পেরিয়ে গেলেও মামলা আর এগোয়নি। ধর্ষণের আলামত ধ্বংসকারী সেই পুলিশ কর্মকর্তাও দিব্বি আছেন বহাল তবিয়তে। ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ধুনট থানার দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা শিল্প এলাকায় কর্মরত। এমন হতাশা নিয়ে মামলার বাদী ওই ছাত্রীর মা কলেজশিক্ষিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে হাজির হয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি ধর্ষক ও ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগের ন্যায় বিচার চেয়ে একটি আবেদন করেন। আবেদনে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রার্থনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষিকার আবেদনের প্রাপ্তি স্বীকার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন