কৃষি অফিসের বিএস কোয়ার্টারগুলো এখন যেন ‘ভূতের বাড়িতে’ পরিণত হয়েছে। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ব্লক সুপারভাইজর (বিএস) কোয়ার্টারগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
রোববার (২৪ মার্চ) সরেজমিনে কোয়ার্টার ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদের পাশেই আলোকঝাড়ী ইউনিয়নে দুটি ও পাকেরহাটে আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নে একটি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার জরাজীর্ণ হয়ে বেহাল দশা অবস্থায় পড়ে আছে। একতলা ভবনের ছাদ ও দেয়ালের সিমেন্ট খুলে পড়ে রয়েছে। কোয়ার্টারের ভেতরে ঝোপ-জঙ্গলে পরিপূর্ণ। প্রাচীর দিয়ে ঘেরা চারপাশ অথচ ভেতরে জন্মেছে বড় বড় গাছ। দেওয়ালের চটা উঠে গেছে। ভবনের দরজাগুলোতে ধরেছে মরিচা, অনেক ঘরের জানালা ভাঙা।
ইউনিয়ন বিএস কোয়ার্টার একটি বাথরুম, একটি রান্নাঘর ও দুটি স্বয়ংকক্ষ রয়েছে। এক সময় বিএসরা বসবাস করছিলেন, পরে তারা অবসর নিলে এগুলো অকেজো হয়ে পড়ে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালের দিকে তৎকালীন সরকার এই ভবনগুলো প্রথমে সিড গোডাউন হিসেবে নির্মাণ করে। পরে এই কর্মসূচি বাতিল করা হলে সরকার ওইগুলো ১৯৮০ সালের দিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বসবাসের জন্য সংস্কার করে কোয়ার্টারে পরিণত করা হয়। মূলত ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের পরামর্শ ও সেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে খুব সহজেই সার, বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণগুলো পৌঁছে দেওয়া হতো। মাত্র ৫০ টাকা ভাড়ায় কর্মকর্তারা এসব কোয়ার্টারে থাকতেন।
বর্তমান ব্লক সুপারভাইজর (বিএস) পদের নাম পরিবর্তন করে সরকার উপ-সহকারী কৃষি অফিসার (এসএএও) নামকরণ করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল আরমান কালবেলাকে বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকেই কোয়ার্টারে বাকী সাহেব ও হান্নান সাহেবদের বসবাস করতে দেখছি। ওনারা অবসর নেওয়ার পর আর আসেননি। বর্তমানে ভবন দুটি ফাঁকা পরে আছে। কোয়ার্টার্সে বিএসরা থাকলে কৃষকরা উপকৃত হবে। তাদের কাছ থেকে উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি ও কৃষি বিষয়ে পরামর্শ পেত। ভবনগুলো সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবহারের উপযোগী হবে।’
ওই এলাকার স্থানীয় কৃষক আ. সালাম কালবেলাকে বলেন, ‘ওই সময় বিএস কোয়ার্টার থাকার কারণে সরাসরি অফিসারের পরামর্শ পেতাম। বর্তমানে কোয়ার্টার না থাকায় ঠিকমতো সেবা পাই না। এতে আমাদের কৃষিকাজ করতে খুব সমস্যা হয়। আমরা চাই এই কোয়ার্টারগুলো আবার চালু হোক।’
পাকেরহাটের স্থানীয় বাসিন্দা কুদ্দুস আলী কালবেলাকে বলেন, ‘আমি অনেক আগেই এখানে এক কর্মকর্তাকে বসবাস করতে দেখেছি। বর্তমানে এই ভবনটিগুলোকে আমি ‘ভূতের বাড়ি’ হিসেবেই জানি। এরপর থেকে কোনোদিন কোনো কর্মকর্তাকে এখানে আসতে দেখিনি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) হাবিবা আক্তার কালবেলাকে বলেন, ‘ব্লক সুপারভাইজর (বিএস) কোয়ার্টারগুলো কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব জায়গা। কোয়ার্টারগুলো পরিত্যক্ত থাকায় কেউ ব্যবহার করছে না। এ ব্যাপারে রিপোর্ট পাঠানো হয়।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নূরুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘সারা দেশের বিএস কোয়ার্টারের চিত্র একই। এটা আসলে স্থানীয়ভাবে সমাধানের বিষয় না, এটা কেন্দ্রীয়ভাবে সমস্যার সমাধান হবে। যদি কোনো প্রকল্প হয়ে থাকে তাহলে মেরামত, সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ হবে। আমাদের এই সম্পদগুলো আসলেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা করি এবং রিপোর্ট পাঠাই। এ ব্যাপারে ওনারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’
মন্তব্য করুন