আতাউর রহমান, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০১ মে ২০২৪, ১১:১৩ এএম
অনলাইন সংস্করণ

মুক্ত জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কচুরিপানার ফুল 

জলাশয়ে মুগ্ধতা ছাড়াচ্ছে কচুরিপানা ফুল। ছবি : কালবেলা
জলাশয়ে মুগ্ধতা ছাড়াচ্ছে কচুরিপানা ফুল। ছবি : কালবেলা

সবুজের মাঝখানে সাদা, বেগুনি ও হালকা গোলাপির মিশেলে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার বিভিন্ন খাল, ডোবা ও জলাশয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে ফুঁটে আছে অযত্নে বেড়ে ওঠা কচুরিপানা ফুল। দেখলে মনে হবে যেন ফুলেল চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে জলাশয়গুলো। তীব্র এই তাপদাহেও প্রস্ফুটিত এসব ফুলের সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

জানা গেছে, কচুরিপানা মুক্তভাবে ভাসমান এক ধরনের বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Pontederia। দক্ষিণ অ্যামেরিকায় এর আদি নিবাস। চকচকে সবুজ ডিম্বাকৃতির পাতাবিশিষ্ট কচুরিপানা পানির উপরিভাগে এরা জন্মায় ও বংশবিস্তার করে। এর কাণ্ড থেকে দীর্ঘ, তন্ত্রময় বহুধাবিভক্ত মূল বের হয়, যার রং বেগুনি কালো। একটি কাণ্ড থেকে ৬টি পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলের থোকা তৈরি হয়ে থাকে। এই ফুলের পাপড়ি নরম হয়। এই উদ্ভিদ দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। এদের সাতটি প্রজাতি রয়েছে।

সৌন্দর্য বিলানোর পাশাপাশি এই উদ্ভিদটি মানুষ ও প্রকৃতির নানা উপকারে আসে। এটি দেশীয় মাছের বংশবিস্তার ও জলাশয়ের পানি ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে থাকে। কিছু কিছু মাছ এটিকে খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করে। এটি থেকে তৈরি জৈব সার কৃষিকাজে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে আসছে। পানির ওপর কচুরিপানার স্তূপ করে এর ওপর সবজি চাষ করা হয়। এ ছাড়াও এটি গো-খাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খাল, বিল, ডোবা, নিচু জমি, পুকুর ও বিভিন্ন জলাশয়ে ফুটে আছে কচুরিপানা ফুল। ফুটন্ত এসব ফুলের সৌন্দর্যে আসা যাওয়ার পথে বিমোহিত হচ্ছেন ফুলপ্রেমী মানুষসহ পথচারীরা। কোমলমতি শিশুদের খেলনা হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে এই ফুল। সৌন্দর্যপ্রেমীরা এসব ফুলের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে মোবাইল ফোনে তুলছেন ছবি। কেউ কেউ ফুলের সঙ্গে নিজেকেও ক্যামেরাবন্দী করছেন পরম আনন্দে। তীব্র এই খরতাপেও কচুরিপানা ফুলের মুগ্ধতায় মন জুড়িয়ে যায় স্থানীয়দের।

স্থানীয় এক বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, এলাকার প্রায় জলাশয়েই কচুরিপানা ফুল ফুঁটে আছে। আমরা জলাশয় পরিষ্কার করে এসব কচুরিপানা তুলে রোদে শুকিয়ে রান্নাবান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি। এ ছাড়াও কচুরিপানা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করি।

স্থানীয় বিদ্যাপীঠ চান্দলা মডেল হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মো. অপু খান চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, একসঙ্গে এতো ফুল ফুঁটে থাকার যে সৌন্দর্য তা অন্য কোনো ফুল থেকে পাওয়া যায় না। এই ফুলের পাপড়ি নকশাখচিত হওয়ায় এর প্রেমে পড়তে বাধ্য হয় মানুষ। কচুরিপানা ফুল গ্রামীণ ঐতিহ্যের একটি ফুল।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, কচুরিপানা একটি ভেষজ উদ্ভিদ। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। কচুরিপানা রান্না করে বা রস করে খাওয়া যায়। এর পুষ্টিগুণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও শরীরকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে। এ ছাড়াও এটি পেট ফাঁপা, কানের সমস্যা, বমি বমি ভাব, গলা ব্যথাসহ নানা রোগ নিরাময়ে দারুণ কার্যকরী।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, কচুরিপানা এক ধরনের বহুবর্ষজীবী ভাসমান উদ্ভিদ। কচুরিপানার মাধ্যমে জৈব সার প্রস্তুত করা যায়, যা কৃষকের কাজে আসে। বর্তমানে কোথাও কোথাও এই উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি জৈব সার বাণিজ্যিকভাবেও বেচাকেনা হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকায় ভাসমান সবজি চাষেও কচুরিপানা ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও এই উদ্ভিদটি গো খাদ্যের চাহিদা মেটানোসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই উদ্ভিদের ফুলও দেখতে চমৎকার। তবে কচুরিপানা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে। এজন্য নিচু ফসলি জমিতে বিশেষ করে ধানের জমিতে এর বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। তা না হলে দ্রুত বংশবিস্তার করে ফসলের ফলনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সোনার দামও ছাড়িয়ে গেল যে পাখির পালক

ইসির নতুন সচিব শফিউল আজিম

ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আইসিইউতে পাঠালেন ছাত্রলীগ নেতা

ইসি সচিবকে বদলি

পাবনায় তেলবাহী লরিচাপায় নিহত ২

সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে কী ঘটেছিল?

ইউরোর জন্য শক্তিশালী দল ঘোষণা পর্তুগালের

জানা গেল বাংলাদেশের উপকূলে কবে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’

অর্থনৈতিক-আঞ্চলিক সামুদ্রিক নিরাপত্তা জোরদারে অস্ট্রেলিয়ার আগ্রহ প্রকাশ

পচা-বাসি খাবার পরিবেশন করার অভিযোগ নোবিপ্রবির ভিস্তা ক্যাফের বিরুদ্ধে

১০

গণসংহতি আন্দোলনের সমাবেশে পুলিশি বাধা

১১

টানা তিনবারের মতো পেকুয়ায় চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী ‘বিএনপির’ রাজু

১২

ভাবির চুল কেটে নিল ননদ, ভাইয়ের মামলা

১৩

টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, দলে ফিরেছেন লিটন

১৪

কোরবানির পশুর বর্জ্য যথাযথভাবে অপসারণে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আহ্বান

১৫

রিমার্ক-হারল্যানের নতুন পরিচালক ইউনিলিভারের সামি আশরাফ

১৬

ডেসকোর প্রিপেইড রিচার্জ সেবা ২ দিন বিঘ্নিত হবে

১৭

কক্সবাজারে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত ১

১৮

জাবিতে স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে গণসমাবেশ ও র‌্যালি

১৯

ইরানি জনগণের মাঝে প্রেসিডেন্ট রাইসি কেন জনপ্রিয় ছিলেন?

২০
X