পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের কাফিলা রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একতলা বিশিষ্ট নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। ১৮ মাসের মধ্যে ভবন নির্মাণকাজ শেষ করার কথা থাকলেও কেবল ছাদ ঢালাই পর্যন্ত আংশিক নির্মাণ শেষ হয় তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে। এরপর গত ১ বছর যাবৎ কোনো কাজ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বারবার ধরনা দিলেও কাজ হচ্ছে না। শ্রেণিকক্ষের সংকটে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
জানা যায়, ১৯৩৩ সালে কাফিলা রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ২০০ জন। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে এক ভবনের নির্মাণ কার্যাদেশ পায় ঝালকাঠির লিটন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়ের কাজের জন্য প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২০ সালে নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। ভবনের কাজ শেষ করার জন্য ১৮ মাস সময় নির্ধারণ করা হলেও পাঁচ বছরেও নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নির্মাণাধীন বিদ্যালয়ের ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের পর এক বছর যাবৎ কাজ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিন বিদ্যালয়ে দেখা যায়, স্কুলের পুরাতন টিনশেড ঘরে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সেখানেও রয়েছে শ্রেণিকক্ষের সংকট।
স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ভবন নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের ইট। পরিমাণ মতো সিমেন্ট ব্যবহার না করায় এখনই বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হোসনেয়ারা পারভিন জানান, এক বছর ধরে নতুন ভবনের কাজ বন্ধ আছে। এতে বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আর নতুন যে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে তা এখনো ব্যবহারের উপযোগী নয়। বর্তমানে পুরাতন টিনশেড ঘরে ক্লাস নেওয়া হয়। বৃষ্টি আসলে টিনের চাল থেকে পানি পড়ে, তাতে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রপাইটার মো. লিটন বলেন, ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে, আমিও দেখেছি। করোনা মহামারির সময়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়। পরে রড-সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম দিগুণ বেড়ে যায়, যে কারণে কাজ করাতে সমস্যা হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবার কাজ শুরু হবে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য একাধিক বার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করেনি। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইফুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন যেহেতু জেনেছি, শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে দেখব।
উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের মিয়া কালবেলাকে বলেন, নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে কিনা সরজমিনে খতিয়ে দেখা হবে। ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছি, অতিশিগগিরই যদি বিদ্যালয় ভবনের কাজ শুরু না করেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন