হাতির আক্রমণে কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে না পেরে বারবার ক্ষতির মুখে পরে শেরপুর জেলার শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকার কৃষকরা। বছরের পর বছর বন্যহাতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই করতে হয় ধান চাষ। বর্তমানে হাতির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় তাদের আতঙ্ক আরও বেড়েছে। তাই পাকা ধান ঘরে তুলতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের।
বাংলাদেশের বনাঞ্চল ভারতের বনাঞ্চলের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সমতল হওয়ায় ভারতের গভীর অরণ্য থেকে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে এসে হাতির দল তাণ্ডব চালাচ্ছে। জেলার তিনটি উপজেলায় মোট ১৯ হাজার ২৭৫ একর বনভূমি রয়েছে। এসব বনভূমির সীমান্ত এলাকাজুড়ে ছুটছে এই হাতির দল। সবচেয়ে বেশি উপদ্রব করছে জেলার শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি, খ্রিষ্টান পাড়া, চান্দাপাড়া এবং নালিতাবাড়ি উপজেলার নাকুগাঁও, পানিহাটা, বুরুঙ্গা কালাপানি এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, তপ্ত রোদে হাতির দল পাহাড়ের উঁচুতে থাকে। বিকেল হলে নামতে শুরু করে লোকালয়ে।
সম্প্রতি শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্ত এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কেউ কাটা ধান মাথায় করে ধান ক্ষেতের পাশে রাখছেন, কেউবা আবার ক্ষেতের পাশে সড়কে রাখছেন। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, সড়কে রাখা ধানগুলো মেশিনের মাধ্যমে মাড়াই করে স্তূপ করে রাখছেন। একই অবস্থা নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার কৃষকদের। তারাও ব্যস্ত সময় পার করছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার নয়াবিল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নাকুগাঁও, কালাপানি ও পানিহাটা গ্রামে ভারতীয় সীমানায় ২৫০ একর জমিতে দুই শতাধিক কৃষক বোরো ধান আবাদ করেছেন। এসব এলাকার ধান পাকতে আরও এক থেকে দেড় সপ্তাহ সময় লাগবে। কিন্তু বাদকুচি, মৌচাক, চৌকিদার টিলা, ঢালুকোনা, নাকুগাঁও ও পানিহাটা সীমান্তবর্তী পাহাড়ি জঙ্গলে দুই সপ্তাহ ধরে বন্যা হাতির দলটি তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান করছে। এতে আতঙ্ক তাদের আরও বেশি।
আদিবাসী কৃষক হিমেল চিরান বলেন, আমি ১৫ কাঠা জমি চাষ করেছি। আরও সপ্তাহ খানেক পরে কাটলে সম্পূর্ণ ধান পেকে যেত। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও ভরসা নেই। কখন যেন হাতি চলে আসে। সব সময় আতঙ্কের মধ্যে আছি।
কৃষক ছাদেক আলী বলেন, অল্প জমি আবাদ করি। গতবার হাতির দল পায়ে পিষ্ট করে সব ধান নষ্ট করেছে। এবার অর্ধেক ধান পাকতেই কেটে ফেললাম। অর্ধেক হলেও তো ঘরে তুলতে পারলাম। এ ছাড়াও গতবার গরুর খাবার হিসেবে খড় পাইনি। এবার খড়ের অভাব হবে না।
নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, বন বিভাগ হাতির ক্ষতির জন্য কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিবে। রেকর্ডভুক্ত জমিতে ফসলের ক্ষতি হলে তাদের আবেদন করতে হবে। পরে যাচাই-বাছাই করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, আশি ভাগ ধান পাকার পর কৃষক ধান কেটে নিয়ে আসবে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আধাপাকা ধান কাটলে পরিমাণে ধান কম পাওয়া যাবে। তবে সতর্ক অবস্থানে থেকে আশি ভাগ পাকার পর ধান কাটার পরামর্শ তার।
মন্তব্য করুন